‘ইউটিউবে নাটকের ভেতর বিজ্ঞাপন বাড়লে দর্শক কমতে পারে’

বর্তমানে দেশের ব্যস্ততম অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব। এবার ঈদে ৪৭টি নাটক-টেলিছবি নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। নানান রংয়ের চরিত্রে অভিনয় করা নাটক-টেলিছবিগুলো দর্শক মহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এসব নাটক-টেলিছবির গল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা আড্ডা দিতে নিয়মিত আয়োজন ‘টুনাইট শো’-এ হাজির হয়েছিলেন এই অভিনেতা।

এবার ঈদে ৪৭টি নাটক-টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব। সবগুলোতে ভিন্ন চরিত্রে দেখা গেছে এই অভিনেতাকে। এ বিষয়ে তৌসিফ বলেন, ‘ঈদে ৫০টি নাটক করার পরিকল্পনা ছিলো। প্রথমে আমি গুনে দেখিনি যে এবার ঈদে আমার কয়টা নাটক যাচ্ছে। পরে গুনে দেখি আর দুই/একটা হলে ৫০ পূর্ণ হবে। দাদির অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কারণে আমি ৫-৬ দিন শুটিং করতে পারিনি। এটা না হলে ৫০ পার হয়ে যেতো। কিন্তু সেটা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। কারণ, দাদির শেষ সময়ে আমি তাকে সময় দিতে পেরেছি।’

দীপ্ত টিভিতে ছিলো ‘সেভেন শেডস অব তৌসিফ’— ‘মনের মতো বাগান’, ‘হ্যালো লেডিস’, ‘আওয়াজ’, ‘চান্স’, ‘পা’, ‘পাঁচ ভাই চম্পা’, ‘টোল’, ‘টু ইন ওয়ান’ নাটকে সাতরকমের তৌসিফকে দর্শকরা দেখেছেন। এর মধ্যে হ্যালো লেডিস নাটকে কপালে টিপ-ঠোঁটে লিপস্টিক, শাড়ি পড়ার বিষয়ে তৌসিফ বলেন, ‘আমার কেরিয়ারে এই সময়ে আমি চিন্তাও করিনি দীপ্ত টিভি আমার মতো ক্ষুদ্র অভিনেতা নিয়ে ৭ দিন ব্যাপী উৎসব করবে। এটা আমার জন্য বড় উপহার। এই সিরিজে যে গল্পগুলো চয়েস করা হয়ে সেগুলো প্রত্যেকটিই ব্যতিক্রম ছিলো। এর মধ্যে হ্যালো লেডিসে টিপ লাগানো, শাড়িপরার বিষয়টি খুবই বিরক্তিকর ছিলো। কারণ, শুটিং ছিলো রাস্তায়। যেখানে ছিলো মানুষের ভিড়। পুরো তিনটি রাত আমাদের রাস্তায় শুটিং করতে হয়েছে। অনেক মানুষের মধ্যে একটি দৃশ্য ছিলো যেখানে মানুষ আমাকে টাকা দেবে, গায়ে হাত দেবে। সেই দৃশ্যে ইচ্ছে করে না হলেও মানুষ তো আমাকে ঘুষিও মেরেছে। এই দৃশ্যটা অনেক ব্যতিক্রম ছিলো। বিষয়টি মজা করেছি।’

‘উইল ইউ ম্যারি মি’ নাটকে ঝুঁটি বাধা ও গালভর্তি লম্বা দাড়িতে দেখা গেছে তৌসিফকে। বিষয়টি সম্পর্কে তৌসিফ বলেন, ‘উইল ইউ ম্যারি মি’ নাটকে যে দাড়ি ছিলো সেটা রাখতে একটা মানুষের সময় লাগবে দুই থেকে তিন বছর। আসলে সেই দাড়ি তো আমার নাই। ওইটা মেকাপ দিয়েই করেছিলাম। বাকিটা আমার ন্যাচরাল ছিলো। তবে ওই নাটকের গেটআপ নিয়ে অনেক আগে থেকেই ভাবনা ছিলো। ওই দাড়িটা বানাতে মেকাপ আর্টিস্টের সময় লেগেছে প্রায় এক বছর।

করোনার কারণে স্বাভাবিকভাবে নাটকের শুটিং বদলে গেছে, কাজের প্রক্রিয়াটা এখন কেমন দেখেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তৌসিফ বলেন, ‘লকডাউনের প্রথম ৫ মাস কাজ করতে পারিনি। লকডাউনের পর কিছু মানবিক কারণে আমিই প্রথম শুটিং শুরু করেছিলাম। ৫০ জনের ইউনিট পরিণত হতো ২০/২২ জনে। সেই সময়টা আমি অনেক বেশি সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতাম এবং সবাইকে বাধ্য করতাম। তবে কাজ থেকে আমি কাউকে বঞ্চিত করতে চাইনি। কারণ আমাদের সবার অর্থনৈতিক অবস্থা একই রকম। কাজ না করলে খাবো কি? তাই সবাইকে নিয়েই কাজ করেছি। এখনো সতর্কতার জায়গা থেকে সেই বিষয়টি অনুসরণ করছি।’

টেলিভিশন ও ইউটিউবে নাটক দেখার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তৌসিফ। তার কথায়, ‘ইউটিউব কেন্দ্রিক ভালোবাসা বা ইউটিউবে ভিউস কাউন্ট আমি সাপোর্ট করি না। কারণ, আমার যতোগুলো নাটক এসেছে সেগুলোর মধ্যে গুটিকয়েক নাটক হয়তো ১ মিলিয়ন হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হয়তো মিলিয়ন পর্যন্ত পৌঁছাবেই না। তাই বলে সেগুলোকে আপনি খারাপ বলবেন? একজন ভালো অভিনয়শিল্পীকে আপনি ভিউ দিয়ে বিচার করতে পারবেন না। একটা কথা বলতে হয়- বড়/গুণী অভিনেতাদের ভিউ কিন্তু কম হয়। সে ক্ষেত্রে নতুন অভিনেতাদের ভিউ কিন্তু বেশি হবে। কারণ তারা ইউটিউব জেনারেশন।’

তৌসিফ বলেন, ‘একটা সময় সবাই ফেসবুকে ফলোয়ার তৈরি করতো। আমরাই সেটা টেনে ইউটিউব পর্যন্ত টেনে আনলাম। এখন ইউটিউবে আমাদের নাটক যাচ্ছে সেটা ভালো দিক। আবার কিছু মানুষ হলো ইউটিউবার, যারা ইউটিউবের মাধ্যমেই আসলো। পুরো বিষয়টি অন্য এক মিডিয়া যা একটু নিয়মের বাইরে থাকে। কারণ এখানে সব কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। যেমন যেখানে করোনা রোগের ওষুধ এখনো সেভাবে বের হয়নি কিন্তু এটার ওষুধ বানিয়ে ইউটিউবে ছাড়া হচ্ছে। সেখানে আবার লাখ লাখ ভিউস। তাই আমি চাই- আমরা যেনো ইউটিউবকে সব কিছু বানিয়ে না ফেলি।’

এই অভনেতার কথায়, চ্যানেলে নাটকের সময় অনেক বিজ্ঞাপন থাকে; এটা নিয়ে আগে থেকেই আমি বিরক্ত ছিলাম। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের কারণে নাটক দেখা সম্ভবই হয় না। আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম বিধায় ওপেনলি বলতে পারিনি কিন্তু এখন আমি বলেতে পারি বা বলতে চাই- আপনার যে কন্টেন্ট/মূলধন সেটাকে মূল্য না দিয়ে সেটার সাপোর্টারকে মূল্য বেশি দিচ্ছেন। তাহলে আপনার মূলধনের মূল্য থাকবে না। তখন আপনি বিজ্ঞাপন কোথায় থেকে পাবেন? তাই কন্টেন্টকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।’

ইউটিবারদের সতর্ক করে তৌসিফ বলেন, ‘এই ঈদের নাকট দেখতে বসে দেখি ইউটিউবে একটা কন্টেন্টের মধ্যে ৬-৭টা বিজ্ঞাপন। এটা ভীষণ সতর্কবার্তা। এই যে মানুষকে আমরা এতো কষ্ট করে ইউটিউবে আনলাম এটা থেকেও তারা আবার বিমুখ হবে। কারণ মানুষ তার জীবন থেকে বের হতে আধাঘণ্টার জন্য একটি কন্টেন্ট নিয়ে বসে। সেখানে এসে যদি আবার এই বিজ্ঞাপনের জ্বালা পোহাতে হয় তাহলে তারা অন্য কিছুর চিন্তা করবে। পৃথিবীর কোন দেশে একটি কন্টেন্টে এতো বেশি বিজ্ঞাপন দেয় না। বেশি বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা আমাদের কন্টেন্টগুলো নষ্ট করছি। আমাদের কাছে যদি ভালো কন্টেন্ট না থাকে তাহলে মানুষ আমাদের সংস্কৃতি ছেড়ে আবার হিন্দি সিরিয়ালে চলে যাবে।’

প্রকৌশলী হওয়ার উদেশ্যে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে স্নাতকোত্তর করেছেন তৌসিফ। অভিনয়ে আসার বিষয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো আমি প্রকৌশলী হই। সেই জায়গা থেকে আমি ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকসে স্নাতকোত্তর পাস করেছি। আমার ইচ্ছে ছিলো আমি ফুটবলার হবো। চেষ্টাও করেছি অনেক। যখন দেখলাম বাংলাদেশে ফুটবলের অবস্থা ভালো না তখন সেই জায়গা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। ওই সময় ক্রিকেটে শিফট করা সম্ভব ছিলো না। এরপর আমি মিউজিকে এসেও ভালো করতে পারলাম না। ৫ বছর সেখানে ব্যয় করলাম। মিউজিক করতে করতে রাজীব ভাইয়ের মাধ্যমে ‘আলটাইম দৌড়ে উপর’ দিয়ে অভিনয়ে আসা। তখন আমি বুঝলাম মানুষ আমাকে নিয়ে যা ভেবেছিলো সেটা চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি। কিন্তু যেটা আমি কখনো ভাবিনি সেটাই আমি একভাবে হয়ে গেছি।’

এন-কে

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img