নভেম্বরে হতে পারে ইউনূস-মোদি বৈঠক

নভেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হতে পারে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তৌহিদ হোসেন বলেন, আগামী মাসে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সময় দুই নেতার প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে সময়সূচির অমিলের কারণে দুই সরকার প্রধানের মধ্যে বৈঠক হয়নি।

নিউইয়র্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, না, তার সঙ্গে ওই প্রসঙ্গে আমার কথা হয়নি। কেননা আমার কাছে মনে হয়েছে, এগুলোর চেয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলোচনা আছে, সেগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত। আমি তাই করেছি। তিনি আরও বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে যে, আমাদের দুদেশের সুসম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি।

ভিসা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, তারা ভিসা নিয়ে কথা বলেছেন। এখন মেডিকেল ভিসা চালু আছে। ভিসা দেওয়ায় অনেকে ভারতে চলে গেছেন। তারা আশা করছেন, কিছুদিনের মধ্যে সব ভিসা চালু হয়ে যাবে। হয়তো বেশিদিন লাগবে না। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথাবার্তা হয়েছে। আমরা বলেছি, প্রথম অবস্থায় সরকার ছিল না কিছুদিন। পুলিশ ছিল না অনেক দিন। এগুলোর কারণে নিরাপত্তায় কিছু সমস্যা হয়েছে, এটা আমরা স্বীকার করি। এখন পুলিশ অনেকাংশে ফিরে এসেছে। সেনাবাহিনী এখনও আছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন অনেক উন্নত হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে ইদানীং বিদেশি কারও কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। অনেক দেশ এখনও ভিসা দেওয়া পুরোপুরি শুরু করেনি, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কবে দেশগুলো ভিসা ব্যবস্থা স্বাভাবিক করবে এটি আমি বলতে পারব না। আজ ইতালিয়ান রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে দেখা করেছেন এবং তাদের কাছে ৬০ হাজার পাসপোর্ট সম্ভবত আটকে আছে। তিনি নিজেও এ বিষয়ে লজ্জিত। তিনি আমাকে বলেছেন যে তারা অতিরিক্ত অফিসার নিয়োগ করছেন যাতে করে পাসপোর্টগুলোর সিদ্ধান্ত দিতে পারে। তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যান্য রাষ্ট্রদূতদের যখন কথা হচ্ছে। তাদেরও আমরা বলছি ভিসা কার্যক্রমে আরও গতি আনার জন্য। একটি বিষয় হচ্ছে, ভিসা হচ্ছে একটি সার্বভৌম অধিকার। কাকে ভিসা দেবে, কতটুকু দেবে এটি তাদের নিজস্ব এখতিয়ার।

এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং তাদের ৩ মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে তারা ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে তাদের সুপারিশগুলো দেবে। আরও কিছু স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন আছে। তখনই কিন্তু রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে। তার আগে রোডম্যাপ ঠিক করা যাবে না।

নির্বাচন কবে হবে এ বিষয়ে বিদেশিরা জানতে চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, সবার কাছে আমরা বিষয়গুলো এমনভাবে উপস্থাপন করেছি যে তাদের বেশিকিছু বলার ছিল না। আমরা তাদের প্রেক্ষাপট বলেছি। এ সরকার আসতে চায়নি এবং নিজে থেকে আসেনি। যুব সম্প্রদায় কিছু জিনিস চায় এবং তারা এমন একটি ব্যবস্থা চায়, যেখানে স্বৈরাচারী সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে না পারে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও তারা সংস্কার চায়। আমাদের এজেন্ডার সঙ্গে তাদের চাওয়া মেলে। আমরা গোটা বিষয়টি তাদের খুলে বলেছি এবং জানিয়েছি এরপরে নির্বাচন দিয়ে আমরা এখান থেকে সরে যাব।

উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বাংলাদেশি গ্রুপের কথা হয়েছে এবং সবাই জোর দিয়েছে যে আমরা যেন তাড়াহুড়ো না করি। তিনি বলেন, এই সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সবাই প্রফেসর ড. ইউনূসের কাছে শুনতে চাইছিলেন যে কী ঘটছে বাংলাদেশে এবং তার পরিকল্পনা কী। এটি আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এর আগে বলেছি। কিন্তু তিনি সরাসরি হাজির হয়ে বলা এবং অন্য মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর মধ্যে পার্থক্য আছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img