প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ গড়তে গলে শিক্ষা অপরিহার্য।’ তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষাই জাতিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়। আমি আশা করি, শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের কল্যাণ করবে, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে। তারা স্মার্ট বাংলাদেশের সৈনিক হিসেবে গড়ে উঠবে, সেটাই আমি চাই।
রোববার (১২ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে সকাল ১০টায় গণভবনে ফল হস্তান্তর করা হয়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রী ফলের বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক মেধাবী। বিদেশের অনেক শিক্ষার্থীর চেয়ে তাদের মেধা বেশি। আমরা দেশে যত সুযোগ সৃষ্টি করবো, ততই তাদের বেধা বিকশিত হবে। আমরা সেসব মাথায় রেখেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আধুনিকায়ন করছি।
বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নারীরা একটা সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারতো না। অনেকে যেতেও চাইতো না, কিংবা বাবা-মাও যেতে দিত না। পরিবেশটাই সেরকম ছিল না। আর আজ ৯৮ শতাংশ ছাত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায়। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই তুলনামূলক বেশি।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্র সংখ্যা কম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রদের সংখ্যাটা কেন কম কারণটা খুঁজে বের করতে হবে। আমাদেরও উদ্যোগ নিতে হবে। কী কারণে ছাত্ররা কমে যাচ্ছে দেখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাসের হারেও মেয়েরা অগ্রগামী। এই বিষয়টা নিয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। সব উদ্যোগের পরও ছেলেরা কেন কমে যাচ্ছে এবং ফলাফলে তারা কেন পিছিয়ে সেটা বের করতে হবে।
তবে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন সরকারপ্রধান। বলেন, মেয়েরা একটা সময স্কুলে যেতেই পারত না। এখন কিন্তু সেটা নেই। ৯৮ ভাগ মেয়ে স্কুলে যায়। মেয়েদের শিক্ষার পরিবেশ আমরাই করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। তারপরও কেউ কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তারা শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, সে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, এটা আমাদের দায়িত্ব। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা একটা শিক্ষানীতি করেছি, এখন সেটা বাস্তবায়ন করছি। বিনামূল্যে আমরা বই বিতরণ করছি। আজকে ৭৬ শতাংশ বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার, এটা আমাদের অর্জন।
তিনি বলেন, শিক্ষার ব্যয়কে বিনিয়োগ মনে করে সরকার। শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবেশ তৈরি, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটিই করতে চেয়েছে সরকার। সরকার অভিভাবকদেরও সচেতন করতে কাজ করেছে। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়। শিক্ষার ব্যয়কে বিনিয়োগ মনে করে সরকার। আওয়ামী লীগের চেষ্টা ছিল শিক্ষার বিষয়ে আগ্রহী করা। এর ফলে সাক্ষরতা ও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে। তবুও কেউ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে ৬০ দিনের মধ্যে ফল পাচ্ছে। আগে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও ফলাফল পায়নি। আওয়ামী লীগ ফলপ্রকাশ নিয়মের মধ্যে এনেছে। ৭৫ এর পরে যারা সরকারে এসেছিল, তাদের সময় শিক্ষার পরিবেশ ছিল না। মেধাবীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে বিপথে নেয়া হয়, তখন সেশন জট ছিল। এমনকি তখন সাক্ষরতার হার বাড়েনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৬ শতাংশ। ১৫ বছরে এটি বড় অর্জন। এবারে অধিকাংশ বোর্ডে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। আওয়ামী লীগ নারী শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তবে কেন ছাত্র কম, তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিনা পয়সায় বই ও বৃত্তি দিচ্ছে, কোভিডের সময় অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছিলাম। যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন। যারা কৃতকার্য হতে পারেনি মন খারাপের কিছু নেই। আবার ভালোভাবে উদ্যোগ নিলে আগামীবার পাস করবে। অকৃতকার্যদের অভিভাবকরা গালাগালি নয়, সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগী করতে হবে। ডিজিটাল যুগের ছেলেমেয়েদের মেধা অনেক বেশী, সেই মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই ১৫ বছরে সাক্ষরতার হার, কারিগরি শিক্ষা ও মেয়েদের শিক্ষার হার বেড়েছে। কেননা কারিগরি শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আগ্রহী করতে নতুন বই বিনা পয়সায় দিচ্ছি। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ব্রেইল বই দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের ভাষায়ও বই দেয়া হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলায় টেকনিক্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।
শুধু মুখস্থ বিদ্যা নয়, শিশুর মেধা-মনন বিকাশের সুযোগ দেয়ার লক্ষ্য রেখেই কারিকুলামে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। শিক্ষকদেরও বেতন ভাতা, সুযোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে সরকার বলেন তিনি।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফলাফল দেওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, একটা সময় মাসের পর মাস ছেলেমেয়েরা ফলাফল পেত না। এখন ৬০ দিনের মধ্যে পায়। কোভিডের মধ্যেও যথাসময়ে আমরা রেজাল্ট দিয়েছি।
এবারের পরীক্ষায় যারা কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে অভিভাবক ও শিক্ষকদেরও অভিনন্দন জানান তিনি। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তাদের মন খারাপ না করে আগামীতে আরও ভালো করার তাগিদ দেন সরকারপ্রধান।
এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, ফেল করেছে বলে গালমন্দ করবেন না। ফেল করেছে এতেই তো তাদের মনোকষ্ট। তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে হবে। পড়াশোনার দিকে আরও মনোযোগী করতে হবে। তাদের গালমন্দ করলে শিক্ষার্থীরা সেটা নিতে পারে না এবং অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এদিন সোয়া ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা। এতে মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। এ পরীক্ষা শেষ হয় ১২ মার্চ। এরপর ১৩ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত হয় ব্যবহারিক পরীক্ষা। এতে সারাদেশের ৩ হাজার ৭০০ কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৭৩৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন।
এমজে/