বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষে বুয়েট ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা, ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হল ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থানসহ চার দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীর উপর আপনারা সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল। ৭ অক্টোবর ২০১৯ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার নৈতিক ও সাংগঠনিক অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। ছাত্র রাজনীতির নামে এমনকি ছাত্রলীগের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে জিয়া-এরশাদ-খালেদা-নিজামী প্রবর্তিত হত্যা-খুন-সন্ত্রাস পরিচালনা করা যে কোনোমতেই সম্ভব নয়, সেটি এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু শেখ হাসিনা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করেছেন, আবরারের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, প্রশাসন বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অতীতেও সমর্থন করেনি, বর্তমানেও করে না। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বারংবার বলার চেষ্টা করেছে, বাংলাদেশের মহান সংবিধান ও বুয়েট আইন কোনটিই ছাত্র রাজনীতি বন্ধের এই সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয় না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের পর পাঁচ বছর অতিক্রম হয়েছে। এসময়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নামে সেখানে ধর্মীয় উগ্রবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও বিশ্ব মানবতা বিরোধী মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ তাদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে খুঁটি গেড়ে বসেছে, বাঙালির মহান আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসকে অবজ্ঞা করা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে স্মরণ করতে বাধাদান করা হয়েছে। একইসঙ্গে একজন শিক্ষার্থীর সংবিধান সম্মত চলাফেরা, মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও সংগঠন করার যে অধিকার তা চূড়ান্তভাবে খর্ব করা হয়েছে, বৈষম্যমূলক-হিংসাত্মক-বিভেদের সামাজিক পরিকাঠামো চালু করা হয়েছে, জোরপূর্বক মতবাদ চাপিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সৃষ্টিশীল সত্তাকে হত্যা করার প্লট রচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা রাখা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরূপ কর্মকাণ্ড কোনোমতেই মেনে নেয়ার মতো নয়।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পী, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজল কুন্ডু, মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ শামীম, বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল শাখার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঘোষিত কর্মসূচিগুলো হলো- ১. বুয়েটের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিম রাব্বীর আবাসিক হল ফিরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বুয়েট শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি; ২. আধুনিক, স্মার্ট ও পলিসি নির্ভর নিয়মতান্ত্রিক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতামত আহ্বান ও আলোচনা; ৩. সাম্প্রদায়িক-মৌলবাদী-জঙ্গি কালোছায়া থেকে বুয়েটকে মুক্ত করতে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন এবং ৪. বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা।
এমজে/