চাহিদার বিপরীতে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট : প্রতিমন্ত্রী

দেশে চাহিদার বিপরীতে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতি প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

আজ রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এম. আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বর্তমান দেশে দৈনিক প্রায় ২ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের সঙ্গে দৈনিক প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট সমতুল্য আমদানি করা এলএনজি জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে চাহিদার বিপরীতে গ্যাসের ঘাটতি প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।

বিদ্যমান ঘাটতি এবং ভবিষ্যতে গ্যাস চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৮টি বিভিন্ন ধরনের কূপ খনন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, যার সফল বাস্তবায়নে গড়ে দৈনিক ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে ১০টি কূপের খনন ও ওয়ার্কওভার কার্যক্রম শেষ হয়েছে, যার মাধ্যমে দৈনিক ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে দৈনিক ৩৩ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যমান দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটির সক্ষমতা সম্প্রতি দৈনিক ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে এলএনজি সরবরাহের মোট সক্ষমতা দৈনিক এক হার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।

এলপিজি আমদানি নির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য না কমলে রেগুলেটরি কমিশনের দেশের বাজারে বেসরকারি এলপিজির মূল্য কমানোর সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

নসরুল হামিদ বলেন, দেশের বেসরকারি এলপিজি আমদানি নির্ভর হওয়ায় (মোট চাহিদার ৯৮ ভাগ) আন্তর্জাতিক বাজারে এলপিজির মূল্য না কমলে রেগুলেটরি কমিশনের বাজারে বেসরকারি এলপিজির মূল্য কমানোর সুযোগ নেই। বর্তমানে প্রতি ১২.৫ কেজি সরকারি এলপিজির মূল্য ৫৯১ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি বেসরকারি এলপিজির মূল্য ১২২ দশমিক ৮৬ টাকা। সে অনুযায়ী বহুল ব্যবহৃত বেসরকারি ১২ কেজি এলপিজি গ্যাসের মূল্য ১ হাজার ৪৭৪ টাকা।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে এলপিজি গ্যাস আরও সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করার জন্য কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর মাতারবাড়ি এলাকায় বৃহদাকার এলপিজি টার্মিনাল এবং চট্টগ্রামের লতিফপুর মৌজায় বটলিং প্ল্যান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট স্থাপনে উৎসাহীকরণে নীতিমালা সংশোধনের কার্যক্রম চলছে। এতে এলপিজির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য সহনীয় রাখা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ২৩ হাজার ১৫৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৪১টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত আছে। এছাড়া ভারত থেকে ২ হাজার ৬৫৬ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে।

নসরুল হামিদ বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী মোট ১১ হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৮টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং দরপত্র প্রক্রিয়াধীনের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে মোট ৯ হাজার ৮৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৩টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২৪ হতে ২০২৭ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে যথাক্রমে— মাতারবাড়ী, গাজীপুর, সৈয়দপুর, ঘোড়াশাল, ময়মনসিংহ, রূপসা, রামপাল, পটুয়াখালী, মেঘনাঘাট, কেরানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

এ ছাড়া মোট ২ হাজার ২২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে দরপত্র প্রক্রিয়াধীন বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০২৬ হতে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে যথাক্রমে— ফেঞ্চুগঞ্জ, গজারিয়া, মিরসরাই, মেঘনাঘাট ও রাউজানে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।

সংসদ সদস্য মোছা. জান্নাত আরা হেনরীর এক প্রশ্নের জবাবে নসরুল হামিদ বলেন, সরকার কর্তৃক জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে বিকল্প জ্বালানির উৎস হিসেবে সৌর বিদ্যুৎ প্রসারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ কার্যক্রমসমূহের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন কর হয়েছে যার সম্মিলিত ক্ষমতা ৯৭১.৭০ মেগাওয়াট। উক্ত কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় যমুনা নদীর তীরে ৭.৬ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতার একটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ; যা হতে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, এছাড়া ৮৮.৭৫ মেগাওয়াট পিক ক্ষমতার আরও একটি সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। যার বাস্তবায়ন কাজ চলতি বছরের জুনে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত রয়েছে।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img