রোজিনা ইসলামকে হেনস্থা মানে স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার অপচেষ্টা। রোজিনা ইসলামের হাতে হাতকড়া মানে সংবাদ মাধ্যমকে শিকল পরানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গণমাধ্যমবান্ধব। তাঁরা গণমাধ্যমকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকেন। রোজিনা ইসলামকে যারা হেনস্তা করেছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন(সিইউজে)।
আজ ১৮ মে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় দৈনিক প্রথম আলোর সিনিয়র প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে হেনস্তা ও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে)আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন সাংবাদিক নেতারা।
সিইউজে সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলামের পরিচালনা ও সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়েনের (বিএফইউজে) সাবেক সহ-সভাপতি শহিদ উল আলম, সিইউজের সহ সভাপতি অনিন্দ্য টিটো, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহ উদ্দিন মো. রেজা, সহ-সভাপতি স ম ইব্রাহিম,চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক নজরুল ইসলাম, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দীন হায়দার, ক্রীড়া সম্পাদক দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলিউর রহমান, সিইউজে নির্বাহী সদস্য মুহাম্মদ মহরম হোসাইন, চট্টগ্রাম টিভি জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি নাসির উদ্দিন তোতা, চট্টগ্রাম টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর বাবু,সিইউজে সদস্য সুবল বড়ুয়া, প্রীতম দাশ
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, সরকার ও সাংবাদিকদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাথে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। একজন নারী সাংবাদিককে তার পেশাগত দায়িত্বে এভাবে হেনস্তা করে পুরো সাংবাদিক সমাজকে কলংকিত করেছে এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করে পুরো সাংবাদিক সমাজ।
তিনি আরও বলেন, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ রাজপথে নেমে আরো কঠোর অন্দোলনে যাবে।
মানববন্ধনে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, রোজিনা ইসলামকে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা যেভাবে হেনস্তা করেছে, আমার মনে হয়েছে- তারা আমাকে হেনস্তা করেছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সাথে এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে তাকে মুক্তি দিতে হবে।
এসময় চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিক ও কবি, প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার বলেন, রোজিনা ইসলাম শুধু একটি নাম নয়- রোজিনা মানে আমাদের কথা বলার অধিকার। রোজিনা মানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের অধিকার। রোজিনা মানে গণতন্ত্র চর্চার অধিকার। রোজিনা ইসলাম যে আক্রোশের স্বীকার, সেই আক্রোশ থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। আমাদের পেশাদারিত্বকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে।
এই সরকারকে বিব্রত করার জন্য কিছু কিছু অতি উৎসাহী কর্মকর্তা এই কাজ করেছেন জানিয়ে সেসব অতি উৎসাহী কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি বলি, সরকার শুধু আপনাদের নয়, আমাদেরও। আমাদেরও কথা বলার অধিকার আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নথিপত্রের তথ্য চুরির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় রোজিনা ইসলামের রিমান্ড আবেদন খারিজ করে দিয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।এর আগে গতকাল সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয় রোজিনা ইসলামকে।
সোমবার স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষ থেকে মোবাইল ফোনে ছবি তুলে এবং শরীরে লুকিয়ে নথিপত্রের তথ্য চুরি অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের ৩ ও ৫ ধারায় মামলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, গত ১৭ মে বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটে আসামি রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের একান্ত সচিবের দপ্তরে প্রবেশ করেন। ওই সময় একান্ত সচিব দাপ্তরিক কাজে সচিবের কক্ষে অবস্থান করার সুযোগে আসামি রোজিনা দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র তাঁর নিজ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান। এছাড়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলার সময় সচিবের দপ্তরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য মো. মিজানুর রহমান খান বিষয়টি দেখতে পেয়ে আসামি রোজিনাকে বাধা প্রদান করেন এবং তিনি নির্ধারিত কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতে কক্ষে কী করছেন জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। পরবর্তীতে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্টাফরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম আসামির শরীর তল্লাশি করে তাঁর কাছ থেকে বেশ কিছু গোপনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টের ছবি সম্বলিত মোবাইল উদ্ধার করেন।
আবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সে তার নাম ঠিকানা প্রকাশ করে। যার যাচাইবাছাই প্রক্রিয়াধীন। এ অবস্থায় আসামিকে জামিনে মুক্তি দিলে চিরতরে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মামলাটির সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনসহ সরকারি গোপনীয় ডকুমেন্টস নিজ হেফাজতে রাখার বিষয়ে ব্যাপক ও নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামির পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে পাওয়া একান্ত প্রয়োজন।’