সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১৩৩ তম তিরোধান দিবস আজ। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় লালনের আখড়াবাড়িতে সাধুর হাট বসছে। সাধুসঙ্গে সাধু-বাউল-ফকিররা যোগ দিচ্ছেন।
তিরোধান উপলক্ষে মিলন মেলায় যুক্ত হচ্ছেন পর্যটক দর্শনার্থীরা।
এরইমধ্যে শুরু হয়েছে গুরু-শিষ্যের সাধন-ভজন ও ভক্তি-শ্রদ্ধা নিবেদন। ‘অসাম্প্রদায়িক, মানবতাবাদী, অহিংস’ লালন দর্শনের গানে মুখর এখন ছেউড়িয়া এলাকা।
পুরো এলাকাজুড়েই সাধারণের মাঝে আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। আখড়াবাড়ির বাইরে বসছে তিনদিনের লালন মেলা। উৎসব চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত।
আখড়াবাড়ির ভেতরে অডিটোরিয়ামের নিচে আসন পেতে বসেছেন প্রবীণ সাধুরা। তারা বলেন, প্রায় দু’শো বছর আগে ফকির লালন সাঁই এই ছেউড়িয়ায় দোল পূর্ণিমার তিথিতে সাধুসঙ্গ করতেন। গানে গানে অসাম্প্রদায়িক চেতনা ছড়িয়ে দিতেন। সেই রেওয়াজ মোতাবেক অধিবাস, বাল্যসেবা ও পূর্ণসেবার মধ্য দিয়ে এখনো এই দোল উৎসব হয়।
পাশাপাশি ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক লালন সাঁইজির দেহত্যাগের পর থেকে যুক্ত হয়েছে আরেকটি অনুষ্ঠান। দৌল উৎসবের আদলে ১৩৩ বছর ধরে তিরোধান উৎসবেও সাধু-বাউলরা লালনকে স্মরণ করছেন।
প্রবীণ সাধু নহির শাহ বলেন, পয়লা কার্তিক ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় সব সাধু-গুরু আসন নিয়ে চা-মুড়ির সেবার মধ্যদিয়ে তিরোধানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সন্ধ্যার এই আয়োজনকে বলা হয় অধিবাস। এটি দৈন্য দিয়ে শুরু হয়, সঙ্গে সাঁইজির নাম-কালাম ধরে প্রার্থনামূলক পদ-পদাবলী গান চলতে থাকবে। পরদিন ১৮ অক্টোবর সকালে বাল্যসেবা ও দুপুরে পূর্ণসেবার মধ্যদিয়ে সাধুসঙ্গের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। এরপর কিছু সাধু চলে যাবেন। তবে উৎসব যেহেতু আরও একদিন থাকছে সেই হিসেবে থেকে যাবেন অনেকেই।
তিনি বলেন, এখানে সাধু-গুরুর ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে চরিত্র গঠন হয়। সবাইকে সত্যবাদী, জিহাদী, কষ্টসহিঞ্চু ও অল্পতেই তুষ্ট থাকার মতো চরিত্রবান হতে হবে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টায় লালন একাডেমিতে তিরোধান দিবস উদযাপন উপলক্ষে জেলা কোর কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে বের হয়ে একাডেমির সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে যারা আসছেন এখানে তারা সব ধরণের নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে। বাউল-ফকিরদের খাবার ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এমজে/