দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত কলা

পাহাড়ের মাটিতে উৎপাদিত দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে দেশীয় কলার। সুস্বাদু ও ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এ অঞ্চলের কলার চাহিদা অনেক বেশি। ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে কলার বাগানের সংখ্যা। সম্পৃক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কলা চাষি। অনাবাদি জমিতে একরের পর একর কলার বাগান করে বছর শেষে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন করে নিজেদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় সাপ্তাহিক কলার হাট শনিবার হলেও কলা বিক্রি শুরু হয় শুক্রবার থেকে উক্ত সময়ে উপজেলার সকল অঞ্চল থেকে বিভিন্ন জাতের ও আকারের কলা বাজারে নিয়ে আসেন স্থানীয় ব্যাবসায়ী ও চাষিরা। এতদ অঞ্চলের কলা ফরমালিনমুক্ত ও পুষ্ট হওয়ার দরুন সকলের কাছে এটি বেশ জনপ্রিয়। তাছাড়া পরিবহণ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বড় কলার ছড়িগুলোতে কলার গায়ে দাগ না লাগার জন্য একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা হয়।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড়ি টিলা পথে বেয়ে সুবিধাজনক বিভিন্ন পরিবহনে কলা নিয়ে আসা হয় মাটিরাঙ্গার কলা বাজারে। আর সেখান থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কলা কিনে পণ্যবাহী ছোট ও বড় ট্রাকের মাধ্যমে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ঢাকাসহ সারাদেশে নিয়ে যায়।

দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত কলা.পাহাড়ে কয়েক জাতের কলার চাষ হলেও দুই জাতের কলা আধিক্য বেশি দেখা যায়। বাংলা কলা, অন্যটি চাপা কলা। যার স্থানীয় নাম চিনি চাম্পা কলা। উঁচু পাহাড়ের মাটিতে জন্মায় বলে এগুলোকে পাহাড়ি কলাও বলা হয়। এদিকে অল্প পরিমাণে আনাজি, সাগর ও এটেকলাও পাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ ও জনপ্রিয়তা বেশি হওয়ায় চাপা কলার চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি হয় বাংলা কলা।

পুরো বছর এসব কলার ফলন পাওয়া গেলেও আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ফলন মেলে সবচেয়ে বেশি। এ সময় পাওয়া কলাগুলো আকারেও বড় ও পুষ্ট হয়।

দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি হবার সাথে তাল মিলিয়ে পিছিয়ে নেই কলার দামও। এবার কলার দাম গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। প্রতি পিস চাম্পা কলার আকার ও পুষ্ট অনুসারে ৩শত টাকা শুরু করে ৬শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে চিনি চাম্পা কলার চেয়ে বাংলা কলার দাম চড়া। দেশজুড়ে এর চাহিদা ও বেশ। প্রতিটি বাংলা কলা আকার ও পুষ্ট অনুয়ায়ী ৫শত টাকা থেকে শুরু করে ২হাজার থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। তাছাড়া সাপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ১০ থেকে ১৫ ট্রাক কলা স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

দেশের চাহিদা মেটাচ্ছে পাহাড়ে উৎপাদিত কলা,,কুমিল্লার মিয়া বাজার থেকে কলা ব্যবসায়ী আবু নোমান জানান, সমতল এলাকায় উৎপাদিত কলা এবং পাহাড়ের কলার মধ্যে পার্থক্য অনেক, মাটিরাঙ্গা থেকে কলা বিক্রি করতে সময় লাগে না। বিষমুক্ত বিধায় সবাই এসব কলা লুফে নেয়।

চট্টগ্রামের কলা ব্যবসায়ী আকবর আলী বলেন, সাপ্তাহিক বাজারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেক ব্যবসায়ী আসেন। প্রতি বাজারে ব্যবসায়ী এবং কৃষকের মাঝে প্রায় ৮থেকে ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এতে কৃষকরা বাজারে কলা এনে অপেক্ষা করতে হয় না। খুব সহজে ন্যায্যদামে কলা বিক্রি করতে পারেন তারা।

পাহাড়ের মাটিতে কলা একটি সম্ভাবনাময় ফসল মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: সবুজ আলী বলেন, চাম্পা ও বাংলা কলা পাহাড়ের মাটিতে বেশ ভালো হয়। পাহাড়ের মাটিতে এসব কলা আপনা আপনি বেড়ে ওঠলেও নতুন কলাগাছ লাগানোর সময় প্রয়োজনীয় সার-ওষুধ দিলে কলার ভাল ফলন আশা করা যায়। তাছাড়া কলার চারার আশপাশে জঙ্গল পরিষ্কারসহ মরা পাতা ও অতিরিক্ত চারা কেটে ফেলে দিলেই হয়। কলা একটি লাভজনক ফসল এবং কলা চাষে কৃষকের লোকসান হয় না।

তিনি আরো বলেন, কলা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও বালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে পরামর্শ দেওয়া হয় কৃষকদের।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img