দীর্ঘদিনের দাবির পর ভাতা পাঁচ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতিসহ সব ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছে ট্রেইনি চিকিৎসকরা। আগামী শনিবার থেকে কাজে যোগ দেবেন তারা।
তবে আগামী ছয় মাস পর তাদের ভাতা পুনর্বিবেচনার যে আশ্বাস চিকিৎসক নেতারা দিয়েছেন তা রক্ষা না হলে পুনরায় আন্দোলনে নামারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্র্যাব) মিলনায়তনে পোস্ট গ্রাজুয়েট প্রাইভেট ট্রেইনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এমবিবিএস পাসের পর ১.৫-২ বছর কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পড়ালেখা করে একেকজন এফসিপিএস, রেসিডেন্ট, নন-রেসিডেন্ট ট্রেইনি হতে হয়। এতটুকু আসতে আমাদের বিসর্জন দিতে হয়েছে জীবনের ৩০-৩৫টা বছর, কারও ক্ষেত্রে আরও বেশি। মানুষের উন্নত সেবার জন্যই এই উচ্চতর ডিগ্রি নিতে আসা আমাদের। কিন্তু আমাদের দেওয়া হয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। যেখানে অন্যান্য দেশের রেসিডেন্টদের বেতন শুরুই হয় ৭০-৮০ হাজার টাকায়। দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে মাত্র ২০ হাজার টাকায় সংসার চালানোর ক্ষমতা আমাদের আসলে কারোরই নেই।
নিজেদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রশিক্ষণার্থী চিকিৎসকরা বলেন, দেশের মানুষ প্রথমবারের মতো চিকিৎসকদের একটি বৃহৎ আন্দোলন দেখেছে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ছাড়া আসলে কেউ আন্দোলনে নামে না। আমরাও এমন অবস্থায় আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের আন্দোলন ছিল, ক্ষুধার জন্য, অধিকার আদায়ের জন্য। আমরা প্রত্যেকে সপ্তাহে ৬০-৭০ ঘন্টা ডিউটির করি। অথচ দিনশেষে অসহায়ের মতো আমাদের বিভিন্ন জনের কাছে হাত পাততে হয়, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, গত ১৬ জুলাই আমরা শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলাম। এরপর গত ১৭ জুলাই বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন স্যার, বিএসএমএমইউ উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ স্যার, স্বাচিপের সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন স্যার, মহাসচিপ কামরুল হাসান মিলন স্যার এবং ডিজিএমই ডা. টিটু মিয়া স্যারের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। এতে দুইপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত ও স্যারদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা আমাদের কর্মসূচি স্থগিত করেছি।
সিদ্ধান্তগুলো হলো:
১. ভাতা ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে ২৫ হাজার করা হবে এবং সেটা এই জুলাই মাস থেকেই;
২. এফসিপিএস ট্রেইনিদের ভাতা প্রতি মাসে দেওয়া হবে
৩. সাপ্তাহিক দুই কর্মদিবস ছুটি দেওয়া হবে এবং প্রাইভেট প্র্যাকটিসে কোনো বাঁধা দেওয়া হবে না (সিন্ডিকেট মিটিং এ পাশের পর)।
৪. আন্দোলনরত অবস্থায় একাডেমিক অনুপস্থিতির জন্য কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
৫. জানুয়ারি থেকে আরেক ধাপ ভাতা বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হলে পুনরায় আন্দোলনের কথা জানিয়ে তারা বলেন, আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাদের স্যারদের প্রতিশ্রুতি মেনে নিয়েছি। এর কারণ ওনারা আমাদের কথা দিয়েছেন, আগামী ৬ মাস পর আমাদের ভাতা আশানুরূপ বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে যতো যা কিছুই হোক না কেন, উনারা আমাদের পক্ষে থাকবেন। তবে এই প্রতিশ্রুতিগুলো যদি একটাও না মানা হয়, এর পরিণতি হবে ভয়ানক। আমরা একবার যেহেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শিখেছি, আর পিছপা হব না।
এমজে/