মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে ক্রমাগত বাড়ছে এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। রোগটি ইতিমধ্যে ভয়বহ রুপ ধারন করছে।
পরিস্থিতিকে ঝুঁকিপূর্ণ আখ্যা দিয়ে জনগণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। মশা নিধনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস মাটিরাঙ্গা পৌর মেয়রের।
মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে, গত জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় ১০ জন। এর মধ্য থেকে ৫ জন্য রেফার করা হয়েছে। জুলাই মাসে শনাক্ত বেড়ে হয় ২২ জন। এর মধ্যে ৯জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরন করা হয়েছে। আক্রান্তের সিংহ ভাগ চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা। তাছাড়া ওই এলাকায় প্রায় সকলের ঘরে ঘরে জ্বর সহ ডেঙ্গু রোগাক্রান্ত হবার লক্ষণ রয়েছে। অনেকেই ভয়ে রক্ত পরিক্ষা না করে ডেঙ্গুর হবার সন্দেহে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৬মাসে জেলায় ৫১ জন্য ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত জুন মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ জন। এরই মধ্যে মাটিরাঙ্গায় চলতি মাসেই ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২২ জন্য। ম্যালেরিয়ায় ১জন। জেলার মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বিবেচনায় ডেঙ্গুর হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মাটিরাঙ্গা পৌরসভাকে। তবে চলতি বছর এ রোগে কেহ মারা যান নি বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।।
এলাকা বাসির অভিযোগ হাসপাতাল এবং পৌরসভার অপরিচ্ছন্নতা ও মশা নিধন না করার জন্যই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মশা নিধনের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করছেন না পৌর মেয়র। গড়িমসি করেই সময় ক্ষেপন করা হয়েছে।
মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ময়লা আবর্জনার স্তুুপে পরিনত হয়েছে পুরো হাসপাতালে জুড়ে। পরিষ্কার করার কোন উদ্যেগ নেই কারো । প্রতিটা ড্রেনেই জমানো পানি। এ যেন মশা বা ডেঙ্গু রোগের কারখানা। দূর্গন্ধে সুস্থ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে যাবার উপক্রম।
অপরদিকে ডেঙ্গু রোগীদেরকে মশারী বিহীন শুয়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের সেবিকাদের অভিযোগ রোগীরা মশারীকে বালিশ হিসেবে ব্যাবহার করে। মশারি টাঙ্গানোরো বিষয়টি কে তারা তোয়াক্কা ই করেন না। সচেতনতার অভাবেই সংক্রমন ঠেকানো যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ডেঙ্গু বা মশাবাহিত রোগ হবার আরেক স্থান হচ্ছে ধলিয়া লেক। সব পানিতেই যদি এডিস মশা ডিম পাড়ে তবে মাটিরাংগা ও চৌধুরী পাড়ার মধ্যবর্তী ধলিয়া লেকই উপযুক্ত স্থান। এই লেকের পানি বর্তমানে ব্যবহৃত হয় না বললেই চলে। ফলে এই অব্যাবহ্রত পানি থেকে বিভিন্ন পানি বাহিত সংক্রমন রোগ সহ ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে। তাছাড়া কচুরীপানায় পরিপূর্ণ লেকটিতে আশপাশের মানুষদের বাসার ময়লা আবর্জনাত রীতিমতো পচন সৃষ্টি করছে পানি। লেকটি পরিস্কার করা ও মশার বংশ বিস্তার রোধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহন করা জরুরি হয়ে পড়ছে। তাছাড়া ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চৌধুরী পাড়ায় শীঘ্রই মশা নিধন অভিযান শুরু দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এদিকে, জ্বর হলেই হাসপাতালে গিয়ে রক্ত পরিক্ষার আহবান চিকিৎসকদের। আর আক্রান্ত হলে প্রচুর পরিমান তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
ডেঙ্গু রোগী আরিফ হোসেন বলেন, আমার বাড়ি মুসলিম পাড়া আমি একটি কফিশপে চাকরি করতাম। আমার কাপুঁনি দিয়ে জ্বর আসে। প্রচন্ড জ্বরে অসহ্য হয়ে মাটিরাঙ্গা হাসপাতালে ভর্তি হলে পরিক্ষা নিরিক্ষা করে আমার ডেঙ্গু জ্বরের প্রমাণ মিলেছে।
আরেক রোগী রামশিরা এলাকার আব্দুল হামিদ জানান,জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। পরিক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পরেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও মশক নিধন কার্যক্রম না থাকায় এমন ভয়ববহ অবস্থায় পরিনত হয়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতির কথা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
মাটিরাঙ্গা আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিল্টন ত্রিপুরা বলেন, আপনারা জানেন, এডিস মশা থেকে ডেঙ্গু রোগটা ছড়ায়। ঈদের পর থেকে এর সংক্রমনটা বেশি হচ্ছে শহর থেকে অনেকে এখানে ঈদ করতে আসেন। ঢাকা থেকে যখন কেউ আসেন তখন তিনি ডেঙ্গুর ফেক্টর টা নিয়া আসেন। লোকালি যেখানে জনবসতি বেশি সেখানে ভাইরাসটা দ্রুত ছড়াচ্ছে।
মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. সামছুল হক বলেন, ঈদ পরবর্তী মাটিরাঙ্গা পৌরসভায় ডেঙ্গু সংক্রমন টা বেড়ে গেছে। আমাদের দুইটা ফগার মেশিন আছে। নষ্ট হবার পর একটা মেশিনের বেটারি সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী দু এক দিনের মধ্যে আমরা পৌরসভার সব স্থানে মশার স্প্রে করতে পারবো।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. খায়রুল আলম বলেন, মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। সকলকে অবশ্যই মশারি ব্যাবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।
এমজে/