কারও খবরদারির কাছে বাংলাদেশ নতজানু হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা কোনো দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না, অন্য কেউ আমাদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুক তা আমরা সহ্য করবো না।
তিনি বলেন, কেউ শর্ত দিয়ে আমাদেরকে বেধে রাখতে পারেনি, পারে না, পারবেনা। কারো খবরদারির কাছে বাংলাদেশ নতজানু হবে না। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।
রোববার (১৮ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে এমন কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের পদ্মা সেতু করেছি। দুর্নীতির অভিযানে পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল। আমরা চুপ করে থাকি নি। আমরা প্রতিবাদ করেছি। কারণ আমাদের সততা ছিল। যার ফলে প্রতিবাদ করতে পেরেছি। কিন্তু ঠিকই প্রমাণ হয়েছে যে পদ্মা সেতুতে কোন দুর্নীতি হয়নি। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে সে পদ্মাসেতু করে দেখিয়েছি। কারণ একটাই যে জাতির পিতা বলেছেন কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। আমাদেরকে দাবায় রাখতে পারেনি।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘পদ্মা সেতু করার একটা ঘটনাই আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি পরিবর্তন হয়েছে। আগে যেমন প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধু শর্ত আর শর্ত আর নানা কথা, এখন আর সেটা করতে কেউ সাহস পায় না। বাংলাদেশকে এখন সকলেই সমীহের চোখে দেখে। আমি মনে করি, এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
দুর্নীতি করতে নয় দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিল (বিএনপি) বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির কারণে তখনো বিশ্ব ব্যাংক তাদের অর্থ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু তখনকার সরকারের সাহস ছিল না যে তাদের প্রতিবাদ করে, কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় তারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যখন আমাদের ওপর দোষারোপ করল আমি তার প্রতিবাদ করেছিলাম। কারণ আমার কোনো দুর্বলতা ছিল না। আগের সরকার পারেনি কারণ তাদের দুর্বলতা ছিল। তারা সত্যিই দুর্নীতি করেছিল। আমরা দুর্নীতি করতে আসিনি, মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, জাতির পিতার দেয়া পররাষ্ট্র নীতি সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। সেই নীতি নিয়েই আমরা চলছি।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা দেশ দ্রুত অগ্রগতি লাভ করুক। বিশ্বের অনেকেই সেটা চায়না। বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে- এটা অনেকের সহ্য হয় না। কিন্তু বাঙ্গালীদের কেউ দাবি রাখতে পারেনি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল দুর্নীতি করতে। আর আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।
দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যয় নিয়ে সরকার দেশ গড়ার কাজ করছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন করাই সরকারের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে। ইতোমধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন মাত্র এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল। সেটা বাড়িয়েছিলাম ৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটে। ২০০১ এর বিএনপি ক্ষমতা এসে সেটাকে ৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াটে কমিয়ে নিয়ে এসেছিল। দ্বিতীয়বার ক্ষমতা আসার পর আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি। যা আর্থসামাজিক উন্নয়নে শুধু কাজে লাগেনি, করোনাকালীন সময়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের ডিজিটাল সিস্টেম কাজে লেগেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জীবনের মায়া করিনি। দুঃখি মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার কাজ।’
১৫ আগস্টের খুনিদের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এমজে/