ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শিগগির বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার ফোনালাপে বাইডেন বলেছেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এমনটি জানিয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে বাইডেন বলেন, ‘আশা করি যত দ্রুত সম্ভব সংঘাত বন্ধ হবে, তবে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে।’
সহসাই সংঘাত বন্ধের আশাবাদের কোনো ব্যাখ্যা দেননি বাইডেন। তবে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ইসরায়েল, মিসর, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।
বাইডেন-নেতানিয়াহু ফোনালাপ সম্পর্কে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেন হামাসসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর ইসরায়েলে রকেট হামলার নিন্দা এবং ইসরায়েলের সুরক্ষা ও আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন।
নেতানিয়াহুকে বাইডেন বলেছেন, ‘বিশ্ববাসীর কাছে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেরুজালেমের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকা জরুরি।’
ফোনালাপে বাইডেন ও নেতানিয়াহু আগামী দিনগুলোতে আরও নিবিড় যোগাযোগের মধ্যে থাকবেন বলে একমত হন।
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিনকেন বুধবার ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ফোনালাপে হামাসের রকেট হামলার নিন্দা জানান ব্লিনকেন।
ইসরায়েলের ইহুদি দখলদারদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের ভিটেমাটি ছাড়া করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গত শুক্রবার জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে বিপুল ফিলিস্তিনি মুসল্লি রমজানের শেষ জুমার নামাজে অংশ নিতে এলে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর চড়াও হয়। গত সোমবার এই সংঘাত আরও বেড়ে যায়।
সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণ
পূর্ব জেরুজালেমে পাহাড়ের ওপর পবিত্র একটি স্থানে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি পুলিশের মধ্যে কয়েক দিন ধরে সহিংসতা বৃদ্ধির জেরে ইসরায়েলি সেনা ও হামাসের মধ্যে এই সংঘাত শুরু হয়।
এই স্থানটি মুসলিম ও ইহুদি—দুই ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র। মুসলিমদের কাছে এটি হারাম আল-শরিফ এবং ইহুদিদের কাছে এটি টেম্পল মাউন্ট।
হামাসের দাবি— ইসরায়েল সেখান থেকে এবং নিকটবর্তী আরব অধ্যুষিত শেখ জারাহ থেকে পুলিশ সরিয়ে নিক। সেখান থেকে ইহুদি বসতিস্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করতে চায়।
হামাস এই পদক্ষেপ বন্ধ করার যে আলটিমেটাম দিয়েছিল, ইসরায়েল তা উপেক্ষা করলে হামাস রকেট নিক্ষেপ করতে শুরু করে।
পূর্ব জেরুজালেমে পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে চলা উপর্যুপরি সংঘাতের ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছিল। এপ্রিলের মাঝামাঝি রমজান শুরু হওয়ার সময় থেকেই এই উত্তেজনা শুরু হয়। এরপর শেখ জারাহ’র কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারের ভাগ্য নিয়ে আদালতের প্রত্যাশিত রায় এই ক্ষোভের আগুনে ইন্ধন যোগায়।
বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সংবাদদাতা জেরেমি বোওয়েন বলছেন, দশকের পর দশক ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের মূলে যেসব কারণ, সেগুলোর কোনো সমাধান এতদিনেও হয়নি বলেই ঘুরে ফিরে এই সংঘাত ঘটে।
জেরেমি বোওয়েন বলেন, ‘এবারের সংঘাতের কেন্দ্রে জেরুজালেম। রমজানের সময় পুলিশের বাড়াবাড়ি এবং আদালতের মাধ্যমে কয়েকটি ফিলিস্তিনি পরিবারকে উৎখাতের বিতর্কিত একটি তৎপরতা নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন দফার এই বিরোধ।’
বহুদিন ধরেই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, ইসরায়েলি ডানপন্থিরা জেরুজালেম থেকে ছলেবলে তাদের উৎখাত করতে বদ্ধপরিকর, এবং শেখ জারাহ থেকে ওই পরিবারগুলোকে বাড়িছাড়া করার সিদ্ধান্ত সেই ছকেরই অংশ।
এন-কে