★২২ মার্চ চকরিয়াকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী
★ভূমিহীন ও গৃহহীন ৮৭৪টি পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর
★প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বপ্নের ঘর পাওয়ার আনন্দে স্বপ্নে বিভোর গৃহহীন পরিবার
★পিকআপ চাপায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ভূমিহীন ৬ পরিবারকে দেয়া হয়েছে ১৬ শতক জমিসহ সেমিপাঁকা ৮টি ঘর
আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার, এই স্লোগানে মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় ৮৭৪টি গৃহহীন পরিবারের ঠিকানা হবে লাল-সবুজের রঙিন ঘরে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার স্বপ্নের ঘর পাওয়ার আনন্দে নতুন স্বপ্নে বিভোর গৃহহীন পরিবারগুলো। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন।
কক্সবাজারের প্রথম উপজেলা হিসেবে চকরিয়াকে আগামী ২২ মার্চ মঙ্গলবার ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছেন ইউএনও জেপি দেওয়ান। সোমবার (২০ মার্চ) দুপুরে চকরিয়া উপজেলা হলরুম মিলনায়তনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষনা করবেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, আয়তন ও জনসংখ্যার দিক দিয়ে কক্সবাজারের সর্ব বৃহত্তম উপজেলা হিসেবে সুপরিচিত চকরিয়া উপজেলা। আঠারটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এ উপজেলা গঠিত। উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নে ভূমিহীন ও গৃহহীন ব্যাক্তিদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসন সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রকৃত উপকারভোগী বাছাই করে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের তালিকা অনুযায়ী চকরিয়া উপজেলার আঠার ইউনিয়নের মোট ৮৭৪ টি পরিবারকে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের আওতায় এনে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে উক্ত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৮২ টি ঘর বরাদ্দ প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে আরও ২৫০ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। উক্ত ঘর সমূহ নির্মাণ শেষে ভূমিহীন ও গৃহহীন উপকারভোগীদের মাঝে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট ১৯২ টি ঘরের বরাদ্দ প্রদান করা হয়। এসব ঘরের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২ মার্চ উক্ত ঘরসমূহ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন। এতে চকরিয়া উপজেলায় মোট ৮৭৪ টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করতে সক্ষম হবে। প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী উপকারভোগী ভূমিহীন ও গৃহহীনকে সম্পূর্ণ ভাবে পুনর্বাসন করা সম্ভব হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে, ঙএসব নির্মিত ঘরের মধ্যে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়ায় পিকআপ চাপায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৬ পরিবারকে দেয়া হয়েছে ১৬ শতক জমিসহ সেমিপাঁকা আটটি ঘর। প্রতি ঘরের জন্য ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
এদিকে, ইতোমধ্যে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার নিমিত্তে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের সভাপতিত্বে এক যৌথ সভা উপজেলা প্রশাসনের হলরুম মোহনা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ১৮ইউপি চেয়ারম্যান, সরকারি দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, বীর মুক্তিযোদ্ধা উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় উপস্থিত সকল ব্যাক্তিবর্গ চকরিয়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলার মধ্যে একমাত্র চকরিয়া উপজেলা সর্বপ্রথম ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা হতে যাচ্ছে।
ডুলাহাজারা ইউপি’র মালুমঘাট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের নিহত ৬ ভাইয়ের মধ্যে দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নিহতদের ছোট ভাই প্লাবন শীল বলেন, কখনো ভাবতেই পারিনি সরকার এত সুন্দর ৮টি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেবেন। সেই ঘরে শান্তিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করব। পাকা ঘর পেয়ে কেমন লাগছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি এবং সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করলেন না। সরকার থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে পাশে এসে সহযোগীতা নিয়ে দাঁড়িয়েছে এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারবোনা।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের কোন মানুষ ভূমিহীন, গৃহহীন, আশ্রয়হীন থাকবে না। মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে সারা দেশের মতো চকরিয়ায় ভূমিহীন, গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রথম পর্যায় থেকে তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত চকরিয়া উপজেলায় সর্বমোট ৬শত ৮২টি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে গৃহ হস্তান্তর করা হয়। এসব গৃহায়ণ (ঘর) সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন উপকারভোগী পরিবার বাছাই করে হস্তান্তর করা হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ চতুর্থ পর্যায়ের অবশিষ্ট ১৯২টি গৃহ নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। এখন উপকারভোগীর মাঝে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুধু হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাকী রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী চকরিয়াকে শতভাগ ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত উপজেলা হিসেবে ২২ মার্চ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন বলে আশা রাখছি। চতুর্থ ধাপের ১৯২টি গৃহ হস্তান্তরের মাধ্যমে উপজেলার মোট ৮৭৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দুই শতক জমির মালিকানার সাথে এই বাড়িতে থাকছে দু’টি করে শোয়ার ঘর, একটি রান্নাঘর, একটি শৌচাগার, বারান্দা ও সুপেয় পানির জন্য নলকূপ।
এমজে/