পুলিশ পরিদর্শক হত্যা : ডিবির হাতে প্রভাবশালী আরাভ চক্রের তালিকা

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলার আসামি আরাভ খান আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পাচার চক্রের সদস্য। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে বাংলাদেশে স্বর্ণ পাচার চক্র নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন তিনি। আরাভের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালীদের তালিকা করা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি সূত্র।

এদিকে আরাভের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। শ্বশুরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা আদায় করতেন। এ কারণে ২০১৫ সালে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া ক্যামেরা চুরির মামলাও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, দেশের বেশ কয়েকজন তরুণী আরাভ খানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। মডেলিংয়ের পাশাপাশি স্বর্ণ পাচারে আরাভকে সহযোগিতা করে থাকেন তাঁরা। মূলত রাজধানীর গুলশান এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতে তাঁদের যাতায়াত। দেশের বিভিন্ন এলাকার স্বর্ণ পাচারকারীদের সঙ্গেও তাঁদের সখ্য রয়েছে। মূলত স্বর্ণ পাচার করেই বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন আরাভ। তাঁর ঘনিষ্ঠদের তালিকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তদন্ত করছে সিআইডি : পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফাইন্যানশিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. হুমায়ন  জানান, আরাভের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। কিছু তথ্য-প্রমাণ মেলার পর শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা হবে। তিনি অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন কি না, তা তদন্ত করা হবে।

সিআইডি সূত্র বলেছে, আরাভ স্বর্ণ পাচার চক্রের সদস্য হতে পারেন। আর এই অবৈধ কারবারের মাধ্যমে তিনি অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে থাকতে পারেন। বিশেষ করে দুবাইয়ে আরাভের জুয়েলারি ব্যবসার শত শত কোটি টাকার উৎস নিয়ে অনেক সন্দেহ রয়েছে। পাশাপাশি আরাভের মাধ্যমে কত টাকা পাচার হয়েছে, সে বিষয়েও অনুসন্ধান চলছে।

সূত্রটি বলেছে, দুবাইয়ে আরাভের টাকার উত্স বৈধ না অবৈধ, তা বের করা খুব একটা কঠিন হবে না। কেননা এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) সহায়তায় টাকার উত্স নিশ্চিত করা যায়। তবে কার কার মাধ্যমে টাকা পাচার হয়েছে এবং সেখানে কার টাকা রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় ৪১টি দেশ এবং বিশ্বের ৩০টি অবজারভার দেশ ও সংস্থার সংগঠন এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিং (এপিজি)। বাংলাদেশ সংগঠনটির সদস্য। সংগঠনটির মূল কাজ হলো এই অঞ্চলের দেশগুলোর মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বাস্তবায়নে এবং এ লক্ষ্যে দক্ষতা বাড়াতে কাজ করা।

আরাভের হুমকির অডিও ফাঁস : এদিকে আরাভ খানের সঙ্গে একজন গণমাধ্যমকর্মীর কথপোকথনের অডিও ফাঁস হয়েছে। কথোপকথনের এক পর্যায়ে রেগে গিয়ে ওই সাংবাদিককে আরাভ বলেন, ‘আমার সঙ্গে এমন লোকের পরিচয় আছে, যার সঙ্গে ভিডিওতে কথা বলিয়ে দেব। তখন তার পা ধরেও মাফ পাবেন না।’

আরাভের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা : আরাভ খান ওরফে রবিউল ওরফে হূদয় ওরফে সোহাগ বর্তমানে দুবাইয়ে আছেন, নাকি অন্য কোথায় পালিয়ে গেছেন, তা নিয়ে তদন্ত করছে গোয়েন্দারা। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান বলেন, পলাতক আসামি আরাভ ওরফে রবিউলকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা কাজ করছে। সে যাতে অন্য কোথাও যেতে না পারে, তা ইন্টারপোলকে অবহিত করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আরাভের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশে অবস্থিত দুবাই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে আরাভের পেছনে কারা জড়িত, তাঁর অবৈধ কর্মকাণ্ড এবং স্বর্ণ চোরাকারবার চক্রের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাভ : আট বছর আগে শ্বশুর সেকান্দার আলীকে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আরাভ। এ ঘটনায় রমনা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন উপপরিদর্শক সুজন কুমার কুণ্ডু। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগের সত্যতা মেলায় ২০১৫ সালের ১ মার্চ আরাভের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। একই বছরের ১০ মে তাঁর বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এই মামলায় ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ জামিন পান তিনি। পলাতক থাকায় একই বছরের ২৪ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। আগামী ২৮ মার্চ এই মামলার সাক্ষ্যের দিন ধার্য আছে।

 

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img