নতুন দল গঠন করতে চান ও আনতে চান পরিবর্তন -হিরো আলম

কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান নয়, ভবিষ্যতে নিজেই নতুন দল গঠনের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম। এখন যেসব রাজনৈতিক দল আছে, সব একই রকমভাবে চলছে উল্লেখ করে তিনি বলছেন, দল করলে পরিবর্তন আনতে চান। নতুন কিছু দিতে চান।

জার্মানিভিত্তিক গণমাধ্যম ‘ডয়চে ভেলে’র বাংলা বিভাগের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত এক টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ শীর্ষক অনুষ্ঠানটির গতকাল শুক্রবার রাতে প্রচারিত পর্বের বিষয় ছিল ‘রাজনীতির সংস্কৃতি ও হিরো আলম’।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীন হিরো আলমের কাছে জানতে চান, হিরো আলমের রাজনৈতিক লক্ষ্য কী? কোনো জোটে বা রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন কি না? সরকার পক্ষে বা বিপক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য কেউ কোনো যোগাযোগ করেছেন কি না?

উপহারের গাড়ি অ্যাম্বুলেন্স বানিয়ে বগুড়া মেডিকেলে রাখতে চান হিরো আলম
হিরো আলমকে গাড়িটি উপহার দিয়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপ‌জেলার শিক্ষক মখলিছুর রহমান
জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘আমি সব সময় জনসেবা করা পছন্দ করি। সেই উদ্দেশ্য থেকেই রাজনীতি করা। ভোটের আগে বা পরে বড় কোনো রাজনৈতিক দল এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। কোনো দলে যোগ দিব কি না, এখন পর্যন্ত ঠিক করিনি।’

খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চান, নিজের কোনো নতুন রাজনৈতিক দল করবেন কি না? জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘সবারই স্বপ্ন থাকে দল করার। আমারও নতুন দল করার ইচ্ছা আছে। আমি দল করলে নতুন কিছু নিয়ে আসব। কোনো হিংসা থাকবে না, বিবাদ থাকবে না, সুষ্ঠুমতো ভোট হবে। যাঁর যাঁকে ভালো লাগবে, তাঁকে ভোট দিবেন। সমাজের জন্য কাজ করবেন।’

হিরো আলম বললেন, ‘উপহারের গাড়ি নিয়ে গ্যাঁড়াকলে পড়েছি’
হিরো আলমকে একটি গাড়ি উপহার দিয়েছেন হ‌বিগ‌ঞ্জের চুনারুঘাট উপ‌জেলার শিক্ষক মখলিছুর রহমান
কী রকম রাজনৈতিক দল করতে চান, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে—এ প্রশ্নের জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘নতুন দল করলে পরিবর্তন কিছু নিয়ে আসব। রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সমাজ পাল্টাতে হবে। দলের কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। এখন যেসব রাজনৈতিক দল আছে, সব একই রকমভাবে চলছে। যাঁরা চালাচ্ছেন, একই রকমভাবে চালাচ্ছেন। যিনি ক্ষমতায় আছেন, তাঁর বাবাও আছে, বাবা গেলে ছেলে আছে। তাঁরা কিন্তু দলে আসন ছাড়ছেন না। এতে দলে এবং দেশে কোনো পরিবর্তন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের পরিবর্তন করতে গেলে নতুনদের পদ ছেড়ে দিতে হবে। পরিবর্তন আনার জন্য নতুনদের সুযোগ দিতে হবে।’

ভোটের মাঠে মানুষের সঙ্গে মেশার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হিরো আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মানুষের এতই রাগ, নতুনদের চাচ্ছে। পুরানো দলগুলোর ওপর এতই রাগ যে লোকজন বলছেন, বড় দলগুলোর কথা বাদ দিয়ে কলার গাছও যদি দাঁড়ায়, তাঁকে ভোট দিব।’

এরপর খালেদ মুহিউদ্দীন প্রশ্ন করেন, ‘আপনার মধ্যে কী এমন গুণ আছে যে মানুষ অন্যদের বাদ দিয়ে আপনাকে বেছে নেবেন?’ জবাবে হিরো আলম বলেন, ‘আমি সৎ পথে চলি, মানুষের পাশে দাঁড়াই, সহযোগিতা করি। মানুষ এখন ক্যাডার চায় না, সুখে–দুঃখে মানুষের পাশে থাকবেন, এমন মানুষ চায়।’

অনুষ্ঠানে আরেকজন আলোচক ছিলেন ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদার। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি কূটচালে হিরো আলমকে ভোট দিয়ে জেতানোর চেষ্টা করেছে। বিএনপির নির্দেশে হিরো আলমের পক্ষে কাজ করেছেন নেতা-কর্মীরা।

নিজ নামে ফাউন্ডেশন গড়ার ঘোষণা হিরো আলমের
ভোটের পর কাহালু ও নন্দীগ্রামে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করেন হিরো আলম। গত শুক্রবার দুপুরে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মুরইল এলাকায়
এ প্রসঙ্গে হিরো আলম বলেন, বিএনপির একজন নেতা-কর্মী তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারলে আর কোনো দিন ভোট করবেন না। আওয়ামী লীগ-বিএনপি সব দলের লোকজনই তাঁকে ভোট দিয়েছেন।

খালেদ মুহিউদ্দীন হিরো আলমের কাছে জানতে চান, ‘নির্বাচনী হলফনামায় মাসিক আয় ২১ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। তাহলে কোটি টাকার বাড়ি করছেন কীভাবে?’
জবাবে হিরো আলম বলেন, কোটি নয়, ৫০ লাখ টাকা হবে। সেই টাকা খরচ হচ্ছে বগুড়ার কেব্‌ল ব্যবসার আয়ের টাকায়। সঞ্চালক পাল্টা প্রশ্ন করেন, তাহলে কেব্‌ল ব্যবসার আয়ের কথা কী হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে না? হিরো আলম বলেন, কেব্‌ল ব্যবসা তাঁর বাবার। বাড়ি নির্মাণের টাকাও তাঁর বাবা দিচ্ছেন।

১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (একতারা প্রতীক) হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হিরো আলম। এর মধ্যে বগুড়া-৪ আসনে ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাসদের এ কে এম রেজাউল করিমের কাছে ৮৩৪ ভোটে হেরে যান তিনি। এরপর হিরো আলম অভিযোগ করেন, ভোটের ফলাফলে কারচুপি করে তাঁকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img