এপ্রিলে শেষ হচ্ছে দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ। পাশাপাশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দুই মেয়াদে এই পদে থাকায় তিনি আর রাষ্ট্রপতি হতে পারছেন না। সংবিধান অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে। ফলে হাতে খুব বেশি সময় নেই রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নির্বাচন করার। তাইতো এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হলো— বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হবেন?
এদিকে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে নানামুখী আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও আছে। তবে তাকে নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চললেও সৎ মেধাবী কৃতি এই সাবেক আমলা বর্তমানে এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। এদিকে তার এই নীরবতা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য অপেক্ষা বলেও ধারনা করছেন অনেকেই ।
মূলত ড. মসিউর রহমান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি। তিনি দীর্ঘসময় ধরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তাঁর কর্মজীবনের সততা এবং বুদ্ধিদীপ্ততা নিয়ে কোন রকম সংশয় নেই। তিনি সব সময়ই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেছেন। তাইতো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে বিবেচনার অনেকগুলো যৌক্তিক কারণ আছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ মনে করেন, ড. মশিউর রহমানকে দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি ভাবার অন্যতম কারন, এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হচ্ছে এমন এক সময় যখন নানা কারণেই আগামী সংসদ নির্বাচন দলটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমনকি আন্তর্জাতিক মহলও এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এই নির্বাচন অংশগ্রহণ মূলক হবে কিনা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা এমন নানা প্রশ্ন ক্রমশ দানা বেঁধে উঠছে সবখানে। তাই এই পরিস্থিতিতে এমন একজন রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন যিনি দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সহজে যোগাযোগ করতে পারবেন।। সেক্ষেত্রে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য আলোচিত নামগুলোর মধ্যে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর পাশাপাশি ড. মসিউর রহমান এগিয়ে ।
এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, এমন একজন রাষ্ট্রপতি প্রয়োজন যার জাতীয় পরিমণ্ডলের যে অবস্থাই থাকুক না কেন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেন তার গ্রহণযোগ্যতা থাকে এবং পশ্চিমা কূটনীতিকরা যেন তার সাথে অবাধে যোগাযোগ করতে পারেন। এমন বিষয়টিও খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। আর এসকল নানা বিষয় বিবেচনা সামনে রেখেই অনেকে মনে করছেন, ড. মসিউর রহমান যদি শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে পা রাখেন তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবেনা । কেননা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ড. মসিউর একটি বিরল চরিত্র । যিনি রাজনৈতিক জীবনে একাধিকবার ক্ষমতা পেয়েও নিজেকে প্রভাবমুক্ত রাখতে পেরেছেন । যেখানে ক্ষমতা পেলে অধিকাংশ নেতারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে ও দাপট দেখিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সেখানে ড. মসিউর রহমানের বেলায় দেখা যায় ভিন্ন চিত্র।
ব্যাক্তি জীবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান অত্যন্ত বিনয়ী ও সৎ লোক। তিনি খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতার চাকুরীর সুবাদে পটুয়াখালী জেলার জুবলি হাই স্কুলে তার শিক্ষার হাতে খড়ি। এরপর বাগেরহাট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড.মসিউর রহমান একজন সিএসপি কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন। ১৯৬৫ সালে সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি) তে যোগদান করে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত একটানা ৩৩ বছর পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে শীর্ষ পদে চাকুরী করেছেন। এর মধ্যে দুইবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর’র চেয়ারম্যান ছিলেন । ১৯৯৬ সালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (ইআরডি)’র সচিব থাকাকালীন অবস্থায় অবসরে যান।
১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ছিলেন। মসিউর রহমান সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করলে ড মসিউর রহমানকে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । আজ অবদি তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া ও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ কমিটির চেয়ারম্যান । জ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একজন মেধাবী হিসেবে পরিচিত ড. মসিউর রহমান বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। অর্থনীতির উপর অগাধ পাণ্ডিত্য রয়েছে তাঁর ।
তবে জল্পনা কল্পনা যাই থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত কে রাষ্ট্রপতি হবেন তা চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পছন্দ করবেন তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন। তাই শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে ড. মসিউর রহমান দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান কিনা।
উল্লেখ্য, বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩শে এপ্রিল | তবে সংবিধান অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে । রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।