অপরাজনীতির জন্য বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে : তথ্যমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপি জনগণের কাছ থেকে দুরে সরে গেছে। আবারও জনগণের কাছে যেতে হলে ২০১৩-১৫ সালে মানুষের ওপর পেট্টোল বোমা নিক্ষেপের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন করে অপরাজনীতি করেছে তা বন্ধ করতে হবে।

মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু বে ভিউতে চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভার্চুয়ালে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোইকা এই মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডি করবে। ৭০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত ফিজিবিলিটি স্টাডিতেই প্রকল্পটির প্রয়োজনীয়তা, ব্যবহার উপযোগিতা, মেট্রোরেলের রুটসহ নানা বিষয় উঠে আসবে। একই সঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কত অর্থের প্রয়োজন তারও হিসাব দেবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাইকো।

অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী বিশেষ অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সম্ভবত বিএনপির দম ফুড়িয়ে গেছে, এ জন্য তারা হাঁটা শুরু করেছে। তারা আগে মিছিল করতো, এখন মিছিলের পরিবর্তে হেঁটে পদযাত্রা করছে। সম্ভবত তারা কারো কাছ থেকে নকল পদযাত্রা শুরু করেছে। তারা যেই যাত্রায় করুক না কেন, তাদের এই যাত্রায় জনগণতো দুরের কথা তাদের সাধারণ কর্মীরাও সামিল হয়নি।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এই দেশে আর কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউকে, কন্টিনেন্টাল ইউরোপ, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ সমস্ত সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই নির্বাচন হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তারাই নির্বাচনকালীন সময়ে দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশেও তাই করবে।

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে কোনো সমস্যায় পড়বে কিনা সাংবাদিকদের মন্ত্রী বলেন, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, মানুষের সমর্থনের ওপর বিশ্বাস করে তারা যদি নির্বাচন বর্জন করেন, তাহলে মানুষের কাছ থেকে দুরে সরে যায়। বিএনপি বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারছে কিনা আমি জানিনা। যদি তারা নির্বাচন বর্জন করে তাহলে মানুষ থেকে দুরে সরে গেছে। তবে আমি আশা করি তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে। আমরা চাই বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ণ একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ আগামী দিনের সরকার পছন্দ করুক সেটিই আমরা চাই।

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর সরকারই তখন নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। বিএনপির এই পদযাত্রা, কিংবা কদিন পরে বসার যাত্রা করবে যেই যাত্রায় করুক না কেন, এগুলো করে কোন লাভ হবে না।

মেট্রোরেলের ফিজিবিলিটি স্টাডির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, আজকে চট্টগ্রামবাসীর জন্য একটি শুভ দিন, আনন্দের দিন। কারণ চট্টগ্রামে মেট্টোরেল হবে চট্টগ্রামের মানুষও অনেকে ভাবেনি, এটি আমার জন্যও আনন্দের দিন। বেশ কয়েকবছর ধরে চট্টগ্রামে মেট্টোরেল নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর কাছে বহুবার নিবেদন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আজকে কোরিয়ান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হতে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দা চলছে, সঙ্কটময় বিশ্ব পরিস্থিতি, এইপরিস্থিতির মধ্যে অনেক প্রকল্পের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে সরকার। বিশ্বে অনেক প্রকল্পের কার্যক্রম ধীরগতি হয়ে গেছে। সেই পরিস্থিতির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী এই চট্টগ্রামে মেট্টোরেল নির্মাণের কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম একটি নান্দনিক শহর উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য কি পরিমাণ গুরুত্ব দেই, সেটি একটি প্রজেক্টের কথা আলোচনা করলেই বুঝতে পারবেন। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য তিনটা প্রজেক্ট মিলিয়ে ১.২ মিলিয়ন ডলার একটা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য দিয়েছেন। সেই কাজগুলো চলছে, তিনটা প্রজেক্টের কাজের সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সেই প্রজেক্টগুলো যদি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয় আমি আশাকরি আগামী বছর থেকে চট্টগ্রাম শহরে পানি উঠবেনা।

তিনি বলেন, অনেকগুলো পাহাড় কাটা হয়েছে, পাহাড় কাটার কারণে নান্দনিকতা নষ্ট হয়েছে, পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরকে আরো নান্দনিক করার ক্ষেত্রে মেট্টোরেল প্রজেক্টটি অত্যন্ত সহায়ক হবে। এই শহরের লোক সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। আগামী দশবছর পরে এই শহরের লোকসংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এই শহর ঘনবসতিপূর্ণ শহর। সুতরাং এখানে মেট্টোরেলের কোন বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি ঝাং কিউন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, ইআরডি সচিব শরিফা খান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক সাবিহা পারভীন, কোইকা বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইয়াং-আহ দোহ প্রমুখ।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img