প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। এর ফলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ের জন্য সর্বাধিক অনুকূল গন্তব্য হয়ে উঠেছে। দেশের বিনিয়োগবান্ধব নীতি একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করছে। তিনি বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাতে আমি দেশের ব্যবসায়ী নেতাদেরও অনুরোধ করছি। আপনারা তাদের প্রযুক্তি, জ্ঞান আপনাদের শিল্প খাতে গ্রহণ করুন।
প্রধানমন্ত্রী রোববার সকালে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) আয়োজিত ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক-২০২২’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) হল অফ ফেম-এ ‘কেয়ার ফর ফ্যাশন’ থিম নিয়ে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত এটি চলবে।
এদিকে সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদ। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিলম্বে অর্থ প্রদান শর্তে সৌদি আরবের কাছে জ্বালানি তেল চেয়েছেন।
মেইড ইন বাংলাদেশ উইক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণই আমাদের সাহসের উৎস। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার এখন মাথাপিছু আয়। এ দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের নিজস্ব বাজার তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু রপ্তানি করলেই চলবে না, নিজের দেশের ভেতরেও বাজার সৃষ্টি করতে হবে। করোনাকালীন তার সরকার যতটা সম্ভব তৃণমূলে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া ও সরবরাহ করা যায় সেটা করেছে। এর ফলে মানুষের ভেতর হাহাকার আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পদধ্বনি শুনছি আমরা। যারা শ্রম দেয় তারা আমার বাংলাদেশেরই মানুষ, তাদের আমরা আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে চাই। কারণ এখন বিজ্ঞানের কারণে প্রযুক্তির নতুন নতুন আবির্ভাবে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত করে দক্ষ মানবসম্পদ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেজন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উদ্যোক্তাও সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানে যে প্রভাব ফেলবে সেজন্য আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা সম্পন্ন রোবট প্রযুক্তির ব্যবহারের ব্যবস্থা নিতে হবে, সেজন্য আমরা প্রস্তুত, আমরা তৈরি করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মাথায় আমাদের এই চিন্তাও ঢোকাতে হবে প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মেলাতে হলে আমাদের দেশে-বিদেশে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন পড়বে। তারা যাতে প্রযুক্তি জ্ঞানেও দক্ষ হয় সেজন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কাপড়ের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং শ্রমবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী পুনরায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে জোর দিয়ে বলেন, আমাদের সাড়ে ১৬ কোটির উপরে মানুষ এবং তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। কিন্তু আমরা কারও কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না। নিজের খাদ্য উৎপাদন নিজেই করব। সেজন্য ফসলি জমি রক্ষা করা, যততত্র শিল্প গড়ে না তোলা এবং পরিবেশবান্ধব শিল্প গড়ে তোলার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে শুধু আমরা নই, সারাবিশ্বের মানুষ কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক দিকে করোনার ভয়াবহতায় সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতি, তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোও আজ অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে এবং নানা অসুবিধা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তাই আমরা চাই যুদ্ধ বন্ধ হোক।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দুটি কফি টেবিল বইয়ের মোড়কও উন্মোচন করেন, যার ওপর বিজিএমইএ চলতি বছরের শুরু থেকে কাজ করছে। পোশাক রপ্তানিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারককে বিশেষ সম্মাননাও প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএইফ) সভাপতি সেম অলটান এবং বিজিএমইএ সিনিয়র সহসভাপতি এসএম মান্নান কচি বক্তৃতা করেন। বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সৌদি আরবের কাছে জ্বালানি তেল চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলম্বে অর্থ প্রদান শর্তে সৌদি আরবের কাছে তেল চেয়েছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ড. নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদ সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানেও সৌদি আরবের সহায়তা চেয়েছেন শেখ হাসিনা। বৈঠকে উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
সৌদি উপমন্ত্রী বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয় উত্থাপন করেন। পাসপোর্ট নবায়নে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে তার সম্মতি দেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেন।
সৌদি উপমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী দুটি পবিত্র মসজিদের খাদেম, বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ এবং ক্রাউন প্রিন্স ও সৌদি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, মুখ্য সচিব ডক্টর আহমদ কায়কাউস, সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. জাবেদ পাটোয়ারী এবং সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আলদুহাইলান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।