ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলংকার চেয়ে অনেক ভালো এবং বাংলাদেশে চীনের কোন ঋণের ফাঁদ নেই।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত ডিকাব-টক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দাবি করেন।
মেগা প্রকল্পে দফায় দফায় ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি চীনা ঋণের অংক বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন অর্থনীতিবিদরা শ্রীলংকার উদাহরণ টেনে বাংলাদেশও ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে কি-না? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের কোথাও চীনা ঋণের কোনো ফাঁদ নেই। পশ্চিমা বাণিজ্যিক ঋণ এবং বহু-আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ শ্রীলংকার বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগ। সেই দেশের (শ্রীলংকা) মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ ভাগেরও কম চীনা ঋণ। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা, বিদেশি ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ চীনের ঋণ। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার চেয়ে অনেক ভালো। বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের মাত্রাও অনেক কম।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিশ্রুতিশীল জানিয়ে তিনি বলেন, একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।
রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন ইউক্রেন ইস্যুতে বাংলাদেশের মতো একই মত পোষণ করে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধানে আলোচনা ও আলোচনার গুরুত্ব তুলে ধরে।
রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত লি বলেন, তিনি বলেন, চীন এ লক্ষ্যে আন্তরিকভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা নীরবে কাজ করছি। অবশ্যই, এর প্রভাব দেখা যাবে।’
সম্প্রতি মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে সীমান্ত বিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় বাংলাদেশ চীনের সহায়তা চাওয়ার পর মিয়ানমারে দেশটির রাষ্ট্রদূত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সেই বার্তা পৌঁছে দেন। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করবে এবং প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সমস্যা এখন রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে লড়াই। তাই বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় চীন বাংলাদেশকে কোনোভাবে সাহায্য করতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে লি জিমিং বলেন, ‘চীন নিজেই একটি জ্বালানি আমদানিকারক দেশ এবং আমরা নিজেরাই সমস্যার সম্মুখীন।’ তবে বাংলাদেশ কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পড়লে চীন নির্বিকার বসে থাকবে না বলে যোগ করেন তিনি।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’ তবে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে মুদ্রা বিনিময় এবং চীন বা অন্য কোথাও বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমবর্ধমান উপায় হতে পারে বলে জানান এই কূটনীতিক।
ডিকাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈন উদ্দিন স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
ইউআর/