বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শিশুদের অর্থোপেডিক (হাড় সংক্রান্ত) চিকিৎসায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। অথচ সময়মতো চিকিৎসা না করাতে পারলে শিশুর সারাজীবন ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হয়।
শনিবার বেসরকারি ফরাজী হাসপাতালের উদ্যোগে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রিসেন্ট ডেভেলপমেন্টস ইন অর্থোপেডিকস সাইন্স’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় ৩০ জন চিকিৎসক ছাড়াও ফিজিওথেরাপিস্ট, প্যারামেডিক ও নার্সসহ অর্ধশতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী অংশ নেন।
সায়েন্টিফিক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক সার্জন ডা. রুদ্র মূর্তি শঙ্কর। তিনি সেমিনারে পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিক সায়েন্সের সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করেন। অ্যাপোলো চেন্নাইয়ে জটিল পেডিয়াট্রিক রোগীদের উদাহরণ দেন তিনি। রোগীদের কোন ধরনের চিকিৎসা রয়েছে- তা প্রজেক্টের মাধ্যমে চিকিৎসকদের সামনে উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘পেডিয়াট্রিক অর্থোপেডিকস চিকিৎসায় আমরা সাধারণত শিশুদের ক্লাবফুট, নিতম্বের বিকাশগত ডিসপ্ল্যাসিয়া, হাড় ও জয়েন্টের সংক্রমণ এবং টিউমারের মতো জন্মগত অসঙ্গতি দেখতে পাই। শিশুদের হাড় দ্রুত বর্ধনশীল, তাই শিশুর বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা করতে হবে। কারণ গ্রোথ প্লেট বা জয়েন্টে কোনো আঘাত বা সংক্রমণ শিশুর আজীবন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। ফলে এসব সমস্যা প্রতিরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই শিশুদের অর্থোপেডিক (হাড় সংক্রান্ত) চিকিৎসায় সচেতনতার অভাব রয়েছে। অথচ সময়মতো চিকিৎসা না করাতে পারলে শিশুর সারাজীবন ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হয়।
সেমিনারে চিকিৎসকদের উদ্দেশে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাড়ন্ত শিশুদের হাড়ের স্বাস্থ্য স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য তিনটি জিনিস বেশি প্রয়োজন। তা হলো ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম এবং শারীরিক কার্যকলাপ। ভিটামিন ‘ডি’ এর প্রধান উৎস সূর্যের আলো। এজন্য শিশুকে দৈনিক কমপক্ষে এক ঘণ্টা বাইরে খেলাধুলা করতে দিতে হবে। বাড়ন্ত শিশুর জন্য হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন এক গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন, ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া শিশুর জন্মের সময় কিছু জন্মগত অসঙ্গতি দেখা যায়। কিন্তু হিপ ডিসলোকেশনের মতো অবস্থা খুব দেরিতে প্রকাশ পেতে পারে। তাই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা অপরিহার্য। একইভাবে হাড়ের টিউমারের মতো কোনো ক্ষতি এড়াতে শিশুর হাড়ের ব্যথা বা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করতে হবে। হাড়ের টিউমার প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে শিশুর হাড় ১৫ বছর পর্যন্ত বাড়তে থাকে, তাই হাড়ের ফ্র্যাকচার এবং সংক্রমণের চিকিৎসা এমনভাবে করতে হবে, যাতে চিকিৎসার সময় গ্রোথ প্লেট প্রভাবিত না হয়।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ফরাজী হাসপাতালের চেয়ারম্যান আনোয়ার ফরাজী ইমন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এম মোক্তার হোসেন, হেলথ কানেক্ট ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক শফিক আজম প্রমুখ।
উপস্থিত চিকিৎসকরা এই উপস্থাপনাকে স্বাগত জানান। তারা এ রকম তথ্যবহুল আলোচনা খুবই উপকারী বলে মন্তব্য করেন।
ইউআর/