আপাতত জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই

আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতার কারণে আপাতত দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

শুক্রবার রাজধানীর নিজ বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানিয়ে বলেন, তেল-গ্যাস আমদানির কোনো কমফোর্ট জোন পাচ্ছি না। এজন্য আপাতত দাম কমছে না। তবে লোডশেডিং কমেছে। এখন দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।

৪ অক্টোবর জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, কেন হঠাৎ জাতীয় গ্রিডে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটা চট করে বলা যাবে না। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। তাদের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের দীর্ঘসূত্রতা ও কোভিড পরিস্থিতির কারণে পিছিয়ে যায় বিদ্যুতের সঞ্চালন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের অনেক কাজ। এখনো বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন নিরবচ্ছিন্ন গ্রিড পেতে আরও দুই বছরের মতো সময় লাগবে। সরকার ধাপে ধাপে কাজ করছে।

তিনি বলেন, ৫ ডলারের গ্যাস ৬০ ডলার হয়ে যাওয়ায় সাপ্লাই পেতেই সমস্যা হচ্ছে। তবে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি যেমন: সোলার বিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ থেকে ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার সুযোগ নিয়ে কাজ করছে।

এ সময় জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় নিয়ে বিএনপির নেতাদের বক্তব্যকে ফালতু কথা বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, এসব বাজে কথা। রাজনৈতিক লোকদের টেকনিক্যাল বিষয়ে কথা বলা ঠিক না। তাদের সময় বিদ্যুতের কোনো উৎপাদন ছিল না। নসরুল হামিদ বলেন, বিএনপি বলেছে, এ ধরনের ঘটনা আবার ঘটবে। এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া উচিত যে তাদের কোনো নাশকতার পরিকল্পনা আছে কি না।

ডিজেলের দাম কমাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনায় চিঠি দিয়েছিল তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। ২ অক্টোবর দেওয়া ওই চিঠিতে সংগঠনটি জানায়, বিশ্ববাজারে ডিজেলসহ জ্বালানির দাম কমছে। তাই দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না এলে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাবে খাতটি, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি খাতসহ দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফেরাতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার সময় এসেছে। ডিজেলের দাম কমালে ফুলে ওঠা মূল্যস্ফীতি কমবে। তাতে কিছুটা হলেও দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তি ফিরবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ডিজেলের বড় গ্রাহক রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত। বর্তমানে যখন শিল্প খাতে চাহিদামতো গ্যাস-বিদ্যুৎ মিলছে না, তখন এক প্রকার ডিজেলেই চলছে পোশাকশিল্প। ডিজেলের দাম বাড়ায় বাড়ছে পণ্যের উৎপাদন ব্যয়।

৫ আগস্ট রাতে হঠাৎ করেই ৪২ থেকে ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয় সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ৮০ থেকে ১১৪ টাকা করা হয়। পেট্রোলের লিটার ৮৬ থেকে ১৩০ এবং অকটেনের দাম ৮৯ থেকে ১৩৫ টাকা করা হয়। অর্থাৎ পেট্রোল ও অকটেনের ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির হার ৫০ শতাংশেরও বেশি ছিল।

জ্বালানি তেলের এমন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সব ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা হলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশে তা সমন্বয় করা হবে।

তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তা কমতে থাকে। জ্বালানির মূল্য সহনীয় রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানো হয়। পরে ২৯ আগস্ট দেশের বাজারে লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানো হয় জ্বালানি তেলের দাম।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img