আইএমএফের পর এবার বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এ সহায়তা দিতে চায় ব্যাংকটি। বিদেশি অংশীদার হিসাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতেও আগ্রহী আন্তর্জাতিক এ ব্যাংক। সম্প্রতি কোরিয়া এক্সিম (এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট) ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইয়ুন হি সং এ সংক্রান্ত প্রস্তাবসহ চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। এর আগে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক ৯৫০ কোটি টাকা (১০ কোটি ডলার) ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে। এছাড়াও ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৯ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে। ঋণে সুদের হার শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ এবং ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ম্যাচুরিটি সময়কাল ৪০ বছর। কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক একটি অফিসিয়াল এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি। এটি বিদেশি ব্যবসা পরিচালনায় কোরিয়ান এন্টারপ্রাইজগুলোকে সমর্থন করার জন্য রপ্তানি ঋণ এবং গ্যারান্টি প্রদান করে।
জানা যায়, বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বাজেট সহায়তা হিসাবে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে এ পর্যন্ত ৬৫০ কোটি (৬.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৪৫০ কোটি (৪.৫ বিলিয়ন) ডলার চাওয়া হয়েছে আইএমএফের কাছে। সংস্থাটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) এবং এডিপির কাছে ১০০ কোটি (১ বিলিয়ন) ডলার চাওয়া হয়েছে। ঋণ প্রস্তাবগুলো নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের প্রস্তাবটি ইতিবাচক হিসাবে দেখা হচ্ছে। ঋণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কোরিয়া থেকে ঋণ সহায়তার প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এটি পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে। ইতঃপূর্বে এ ব্যাংক ঋণ সহায়তা করেছে।
অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো ওই চিঠিতে ইয়ুন হি সং বলেছেন, বিশ্ব এক অভূতপূর্ব অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে। রেকর্ড মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা এবং করোনাপরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সব দেশের সরকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের ছয় মাস অতিক্রম হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন ভেঙে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি এবং মুদ্রাবাজারের ওপর। এজন্য নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের আর্থিক চাহিদার ভিত্তিতে তা মেটানোর সর্বোত্তম চেষ্টা চালানো হবে। পাশাপাশি টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে অংশীদারত্ব হিসাবে সব ধরনের সহায়তা দিতে তারা আগ্রহী। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। তিনি কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের এই সুবিধা গ্রহণের জন্য অর্থমন্ত্রীকে আহ্বান জানান। ওই চিঠিতে কোরিয়া এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ইয়ুন হি সং-এর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তার জন্য কোরিয়ার উন্নয়ন অর্থায়ন কর্মসূচি হচ্ছে ইডিসিএফ। এই কর্মসূচির আওতায় কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বাংলাদেশকে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ৫ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪৭৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এছাড়া ২০২১-২০২৫ সালের জন্য নতুন ইডিসিএফ ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তির অধীনে ১০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়। চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশ সরকারকে কনসেশনাল লোন হিসাবে ৫ বছর মেয়াদে ৭০ কোটি ডলার দেওয়া হবে। কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের বিশ্বব্যাপী ইডিসিএফ ঋণের মোট পরিমাণে দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহীতা হচ্ছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য : দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। প্রতিবছর গড়ে দেশটিতে ৫০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। বর্তমান বিনিময় হার ৯৫ টাকা ধরলে রপ্তানির অঙ্ক হবে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালে কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন রপ্তানিকারকরা।
ইউআর/