কুমিল্লার ধর্মসাগরপাড়ের নগর উদ্যানের পাশে কিশোর রবিউল হাসান শাহাদাতকে (১৫) কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রবিবার (২০ আগস্ট) রাতে কুমিল্লার দেবিদ্বার ও কোতয়ালী থানার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাং ‘রতন গ্রুপের’ প্রধান রতনসহ ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের দেখানো জায়গা থেকে দুটি সুইচ গিয়ার, চারটি বড় ছোরা ও একটি এন্টি কাটার উদ্ধার করা হয়। বেলা ১১টায় সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত র্যাব-১১ এর উপ-পরিচালক মেজর মো. সাকিব হোসেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো—ফৌজদারী মফিজাবাদ কলোনীর আবুল কাশেমের ছেলে গ্যাং লিডার রতন (২০), জহির মিয়ার ছেলে আকাশ হোসেন (২০), শাহ আলমের ছেলে সিয়াম হোসেন (২০), ভাটপাড়া এলাকার মনিরুল ইসলামের ছেলে মো. তানজীদ (১৯), কালিয়াজুড়ি এলাকার মৃত মো. ফয়েজের ছেলে ইয়াসিন আরাফাত রাসেল (২১) ও বাঘমারা এলাকার মোহন মিয়ার ছেলে আসিফ হোসেন রিফাত (১৯)।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, নিহত শাহাদাত হোসেন ‘ঈগল গ্রুপের’ এর সদস্য। এই কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা গত ৬ জুলাই রতন গ্রুপের একজনকে মারধর করে। এর জের ধরে উভয় গ্রুপের মধ্যে শত্রুতা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রতন গ্রুপের সদস্যরা নগরীর দুই নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এবং ঈগল গ্রুপের সদস্যরা নগরীর ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থান করে। ২, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝে ধর্মসাগর পার্ক অবস্থিত, যা ১০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে যখনই রতন গ্রুপের সদস্যরা ওই পার্কে যায় তখনই ঈগল গ্রুপের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। একইভাবে ঈগল গ্রুপের সদস্যরা পার্কে গেলে রতন গ্রুপের সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়।
হত্যাকাণ্ডের দিন বিকাল ৪টায় ঈগল গ্রুপের সদস্যরা রতন গ্রুপের সদস্য তানজীদের পরিচিত এক ছোট ভাইকে মারধর করে। এই শুনে রতন গ্রুপের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেয়, ঈগল গ্রুপের সদস্যদের যেখানেই পাবে সেখানেই প্রতিহত করবে। এমন সময় তানজীদ এসে উপস্থিত অন্য সদস্যদের ঈগল গ্রুপের সদস্যরা পার্কে অবস্থান করছে বলে জানান।
পপে রতনের নেতৃত্বে অন্যরা ফৌজদারি মফিজাবাদ কলোনি মাঠে একত্র হয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ ঈগল গ্রুপের সদস্যদের আওয়ার লেডি অব ফাতেমা স্কুলের সামনে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে শাহাদাত দৌড়ে পালাতে না পারলে রাব্বি তাকে ধরে ফেলে। গ্রুপের অন্য সদস্যরা তাকে কিল, ঘুষি, লাথি ও এলোপাতা ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
র্যাব জানায়, আসামিদের দেওয়া তথ্য ও প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রতন গ্রুপের সদস্য রাব্বি শাহাদাতকে ধরে থাকা অবস্থায় তানজীদ সুইচ গিয়ার দিয়ে প্রথমে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। গ্রুপের অন্য সদস্য রানা কিল-ঘুষি মারতে থাকা অবস্থায় আকাশ সুইচ গিয়ার দিয়ে শাহাদাতের পেটের বাম পাশে কয়েকবার আঘাত করে। অন্য সদস্য রতন, হাসিব, রিয়াজ, সানি, সাব্বির ও আরও কয়েকজন লাথি ও ঘুষি মারতে থাকে এবং রাসেল, সিয়াম, আসিফ বড় ছুরি নিয়ে শাহাদাতকে চারপাশ থেকে ঘেরাও করে রাখে। নবী পিঠে বড় ছুরি দিয়ে আঘাত করলে শাহাদাত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তারা পালিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আসামিদের কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ, শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বিকালে কাস্টমস অফিস ও আওয়ার লেডি অব ফাতেমা গার্লস হাই স্কুলের সামনে শাহাদাতকে হত্যা করা হয়। শাহাদাত নগরীর পুরাতন চৌধুরী পাড়ার বশু মিয়ার বাড়ির প্রাইভেটকার চালক শাহ আলম ভূইয়ার ছেলে।
ইউআর/