বাগদাদের সুরক্ষিত গ্রিন জোনে অবস্থিত পার্লামেন্ট ভবনকে ঘিরে রোববার শত শত অস্থায়ী তাঁবু বানিয়েছেন শিয়া বিক্ষোভকারীরা।
৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উপেক্ষা করে বুধবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদর সমর্থকরা।
বিক্ষোভকারীরা এদিন অঙ্গীকার করে ঘোষণা দিয়েছেন, সদর না বলা পর্যন্ত পার্লামেন্ট ভবন ছাড়া হবে না। এএফপি।
শিয়া নেতা মোকতাদা আল-সদরের প্রতিপক্ষ মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে মনোনয়নের বিরোধিতা করে বুধবার পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকে পড়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা।
কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করেও বিক্ষোভকারীদের কবল থেকে মুক্ত করা যায়নি পার্লামেন্ট ভবন। বরং সেটিকে ঘিরে আরো ঘনীভূত হচ্ছে বিক্ষোভ। রোববার ভবনটির চার পাশে বিক্ষোভকারীদের অস্থায়ী বসবাসের জন্য নির্মিত হয়েছে শত শত তাঁবু।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের ভেতরে মার্বেল পাথরের মেঝেতেই রাত কাটিয়েছেন।
কেউ ঘুমিয়েছিলেন পাশের বাগানে, তালগাছের নিচে প্লাস্টিকের মাদুর বিছিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এ আন্দোলন চালাতে হবে ধারণা থেকেই তাঁবু তৈরির পদক্ষেপ কার্যকর করেছেন তারা। ক্ষমতাসীনদের প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
শিয়াদের ধর্মীয় উৎসবের মাস মহররমের শুরুর দিন থেকে শিশু ও মহিলাসহ উপস্থিত বিক্ষোভকর্মীদের মিষ্টান্নসহ বিভিন্ন ধরনের পানীয় বিতরণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া লোকজনকে পানি, চা, কফি ও শরবত পান করিয়েছেন আন্দোলনের নেতারা। স্যুপ, সিদ্ধ ডিম ও রুটিও বিতরণ করেছেন কেউ কেউ।
৪৫ বছর বয়সি বিক্ষোভকারী আবদেল ওয়াহাব আল জাফরি একজন দিনমজুর, নয় সন্তানের বাবা। তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো কিছু আশা করেছিলাম। কিন্তু বর্তমান সংসদে থাকা রাজনীতিবিদরা আমাদের জন্য কিছুই করেননি। এ কারণেই প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হয়েছি।’
কয়েক দশকের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ।
বিক্ষোভকারী উম্মে মাহদি বলেন, ‘আমাদের বিক্ষোভে কতদিন থাকতে হবে, আমরা জানি না। এই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন শুধু মোকতাদা সদরই।
তিনি যখন আমাদের বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেবেন, তখনই আমরা চলে যাবো।’ গত অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনের প্রায় দশ মাস পরও দেশটিতে কোনো নতুন সরকার গঠন করা সম্ভব হয়নি।
দলগুলোর মধ্যে আলোচনা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত সরকার গঠনের প্রচেষ্টা আলোর মুখ দেখেনি। বিশ্লেষকরা বলেন, মোকতাদা আল সদর একসময় মার্কিন ও ইরাকি বাহিনীর বিরুদ্ধে তার মিলিশিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সরকার গঠনে প্রভাব সৃষ্টি করতে চাইছেন।
মোকতাদাপন্থি এমপিদের দাবি, শিয়া নেতা মোহাম্মদ শিয়া আল সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী করা যাবে না। ইরাকে ২০০৩ সালে সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সরকার গঠন নিয়ে জটিলতা লেগেই আছে।
গত অক্টোবরের নির্বাচনে মোকতাদা আল-সদরের ব্লক সবচেয়ে বড় সংসদীয় দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের নেই।
ইউআর/