পদ্মা সেতু হয়ে যাওয়া যাবে দক্ষিণের যেসব জেলায়

দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে ২৫ জুন। এদিন উন্মোচন হবে পদ্মা সেতুর দ্বার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফোটাবেন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে। এসব অঞ্চলের প্রায় ছয় কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কারণ, পদ্মা সেতু এসব জেলাকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অবশিষ্ট অংশের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত করবে। এছাড়া পদ্মা সেতু ও সংযোগ সড়ক এশিয়ান হাইওয়ে রুট এ এইচ-১ এর অংশ হওয়ায় তা যথাযথ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

পদ্মা সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা, বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী ও মুন্সীগঞ্জের মানুষ উপকারভোগী হবেন এই সেতুর। পদ্মা নদীর মাওয়া পয়েন্টে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চল ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী এবং ফরিদপুর জেলাগুলোর উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল লক্ষ্য।

পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে দেশের ২১টি জেলায় যাওয়া যায়। সেতু চালু হয়ে গেলে জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যেতে বড়জোর ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। এছাড়া খুলনা যাওয়া যাবে ৩ ঘণ্টায়, আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।

জাজিরা মাঝিরঘাট থেকে ফেরি ও জোয়ার-ভাটা ভেদে মাওয়া প্রান্তে যেতে এতদিন কখনও একঘণ্টা, আবার কখনও দেড় ঘণ্টা লেগেছে। সেতু চালু হলে সরাসরি বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগতে পারে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কারণ, ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে মাওয়া প্রান্তে। তেমনই খুলনা, যশোর থেকেই চার, সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে।

পদ্মা সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল এটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এই এক্সপ্রেসওয়ের ঢাকা প্রান্ত থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সাধারণভাবে সময় লাগবে মাত্র ৪২ মিনিট। আর ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে যেতে সময় লাগবে ২৭ মিনিট। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই এক্সপ্রেসওয়ের সুফল আরও ভালোভাবে পাবে সাধারণ মানুষ।

ফেরি ব্যবস্থার কারণে এই রুটে এতদিন বিলাসবহুল যান চালাতে পারেননি বাস মালিকরা। তাই এখন তারা পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে নামছেন। পরিবহন মালিকরা ধারণা করছেন, পদ্মা সেতুর কারণে কুয়াকাটার পর্যটনে আরও সম্ভাবনা বাড়বে।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানি প্রস্তুতি নিচ্ছে। গ্রিনলাইন পরিবহন খুলনা রুটে চালু করতে যাচ্ছে ডাবলডেকার বাস। যাত্রীদের আধুনিক সেবা নিশ্চিত করতে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানি, শরীয়তপুর পদ্মা ট্রাভেলস, শরীয়তপুর পরিবহন ও গ্লোরি এক্সপ্রেসসহ আরও অনেক কোম্পানিই এ খাতে নতুনভাবে বিনিয়োগ শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস’ নামে নতুন বাস নামানোর উদ্যোগ নিয়েছেন শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সদস্যরা। প্রাথমিকভাবে ২৪টি বাস— যেগুলো সরাসরি শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাবে। পদ্মা সেতু চালুর সঙ্গে তাদের বাসও চলাচল শুরু করবে বলে জানা গেছে। আগামী ২৬ জুন থেকে চালানো শুরু করতে চায় শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস।

শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহমদ তালুকদার বলেন, ‘শরীয়তপুরের মানুষের জন্য পদ্মা সেতু স্বপ্নের মতো। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কে যাদের রুট পারমিট আছে, তারাই নতুন বাস নামাচ্ছেন। নতুন আঙ্গিকে আমরা বাস তৈরি করছি। এখানে নতুনভাবে বিনিয়োগ করছি।’

মাদারীপুর জেলা বাস মালিক সমিতির ২২টির সঙ্গে আরও ২৫টি বাস যুক্ত হচ্ছে। ‘সার্বিক’ পরিবহনের ৫৭টি বাসের সঙ্গে যুক্ত হবে ২০টি চেয়ারকোচ ও ৫টি এসি গাড়ি। এছাড়া সোনালি ও চন্দ্রা পরিবহনেও নতুন বাস যুক্ত করার কথা ভাবছেন বাস মালিকরা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা মহাবিপ্লব ঘটবে। সেতু চালু হলে পরিবহন কোম্পানিগুলোর অত্যাধুনিক বাস বিভিন্ন জেলার সঙ্গে চলাচল শুরু করবে। তবে গাবতলি থেকে বাস পদ্মা সেতু হয়ে যেতে পারবে না। কারণ, দিনের বেলা ঢাকায় ঢোকার অনুমতি নেই। তবে সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়মিত চলতে পারবে।’

দক্ষিণাঞ্চলের এসব জেলার গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করলে বাড়‌তি চাপ তৈ‌রি হ‌বে কিনা? এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ব‌লেছেন, এসব অনেক ভাবনা-চিন্তা আমাদের আছে। সংশয় ছিল পদ্মা সেতু হবে কী হবে না। সেটা যখন পেরেছি, এসব চাপও আমরা ইনশাআল্লাহ, মোকাবিলা করতে পারবো।

ইউআর/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img