চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (চবিসাস) সভাপতি ও কর্মরত সাংবাদিকদের হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রোববার (১৯ জুন) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর এক লিখিত পত্রে এসব অভিযোগ করেছেন চবিসাস নেতৃবৃন্দ। এতে উঠে এসেছে ৯ ছাত্রলীগ কর্মীর নাম।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে মাদক সেবন ও যোগান দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
চবিসাস সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার প্রায় ২০ জন ছাত্রলীগকর্মী আলাওল হলের ২০৫ নং কক্ষে গিয়ে চবিসাস সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ কর্মরত সাংবাদিকদের হুমকি ধমকি প্রদান করে। তারা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের কর্মী।
অভিযুক্ত ৯ ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের ওরফে তারকাটা নিলয়, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওবায়দুল হক লিমন ওরফে গাঁঞ্জা লিমন , একই শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের রানা আহমেদ ওরফে ইয়াবা রানা , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের আশিষ দাস ওরফে গুটি আশিষ , দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাদুর রহমান ওরফে লাইট সাজ্জাদ, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের তুষার তালুকদার বাপ্পা ওরফে কানা বাপ্পা, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আবির আহমেদ ওরফে নলা আবির , সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের প্রমিত রুদ্র ওরফে সিসা প্রমিত ও একই শিক্ষাবর্ষের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের জাহিদুল ইসলাম ওরফে বিড়ি জাহিদ ।
এদের মধ্যে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র আব্দুল্লাহ আল জোবায়েরের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আসবাবপত্র চুরির অভিযোগ আছে। গত করোনার সময়েও সাংবাদিক ব্লকের ওয়াইফাইয়ের তার চুরি করে সে। পরে তার কাছ থেকে তারটি উদ্ধার করলেও তা আর পূর্বের অবস্থায় পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ সাংবাদিক সমিতির। তার নেতৃত্বে চবি মেডিকেলে ভাংচুর ও ডাক্তারদের অবরুদ্ধ করার অভিযোগও আছে।
একই শিক্ষাবর্ষের সংস্কৃত বিভাগের ছাত্র প্রমিত রুদ্র থাকেন আলাওল হলের নিচতলায়। তার বিরুদ্ধে হলে মাদক যোগান দেওয়ার অভিযোগ আছে খোদ ছাত্রলীগের মধ্যেই।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের অর্থনীতি বিভাগের রানা ঘটনার দিনও মাদক সেবন করেছিলেন। গত ২২ মে তার নেতৃত্বে স্থানীয় গ্রামে হামলা চালায় ছাত্রলীগের এই অংশটি। সেদিন নারী-শিশুর ওপরেও হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। একইদিন স্থানীয়দের বাড়িঘরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভাংচুর ও টিন কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এদের নেতৃত্বে ছিলেন রানা।
এদিকে আলাওল হলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায় প্রতিদিন রাতেই হৈ-হুল্লোড় করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। রাত হলেই বেড়ে যায় তাদের মাদক সেবনের মাত্রা। রুমে রুমে বসে মাদকের আসর। উচ্চ শব্দে গান-বাজনাও করে তারা। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা বিঘ্নিত হয়।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াসের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এমন বেপরোয়া হয়ে গেছে ছাত্রলীগের এই অংশটি। তিনি এদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে নিজের হাতে রাখছেন।
কিন্তু এসব বিষয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে ‘সাংবাদিকরা হচ্ছে মঙ্গলগ্রহের প্রাণী, তাদের যেটা ইচ্ছা তারা সেটাই করতে পারবে’ বলে কল কেটে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি, এরকম বিষয় কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি দেখবো।’