জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তার ন্যায়সঙ্গত সমাধানের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বুধবার (১৮ মে) দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে রাষ্ট্রপ্রধান এ আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই সম্মেলনে বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দেন আবদুল হামিদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এই সম্মেলনে আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিশ্বের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ বাস করে দক্ষিণ এশিয়ায়, এই এলাকা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এটি প্রধানত একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল যেখানে মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য শস্য ও গবাদি পশুর উপর নির্ভরশীল। গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র নদী এই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী অববাহিকায় বসবাসকারী লাখ লাখ মানুষের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু পানি দূষণ, বাঁধ নির্মাণ এবং উজান থেকে পানি সরানোর কারণে খরা, আকস্মিক বন্যা এবং ভাটির দিকে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আগামী বছরগুলোতে এই অঞ্চলে বসবাসকারী লোকেরা সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে তা হল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হুমকি৷ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে কৃষি ফসলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, “আন্তর্জাতিক আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তার ন্যায়সঙ্গত সমাধানের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে এবং এক হয়ে কাজ করতে হবে।”
তিনি বলেন, “ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র পরিণতির সম্মুখীন হতে পারে। অসময়ের বৃষ্টি, হিমালয়ের হিমবাহের দ্রুত গলন এবং শুষ্ক মৌসুমে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে খরা ও আকস্মিক বন্যার হুমকির মুখে পড়লেও বাংলাদেশের খাদ্য সরবরাহের অনেক উন্নতি হয়েছে।”
আবদুল হামিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বল্প সম্পদ এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু’ সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। সুতরাং, এখন সুনির্দিষ্ট উপায়ে এই বৈশ্বিক সমস্যাটির মোকাবিলা করা জরুরি প্রয়োজন, যা বাংলাদেশ এখন মোকবিলা করছে।”
জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “এটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। ‘স্বাভাবিক কাজ’ এই মনোভাব নিয়ে গুরুতর এই সমস্যার মোকাবিলা করলে সমাধান হবে না। এর সমাধানে দরকার কঠোর পদক্ষেপ, এবং তা এখনই। এই বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে দরকার বৈশ্বিক উদ্যোগ।”
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোকে অবশ্যই গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত সংস্থান সরবরাহ করতে হবে। উচ্চ ফলনশীল এবং বন্যা, খরা এবং লবণাক্ততা-সহনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিতে হবে। যথাযথ অভিযোজন কৌশল গ্রহণের জন্য গবেষণা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলায় বিশ্ব আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। এই দুর্ভাগ্য বাস্তবে প্রকাশ হওয়ার অপেক্ষা করে আমরা অলস বসে থাকতে পারি না। কাজের জন্য সময় নষ্ট করলে হবে না। সান্ত্বনামূলক প্রতিশ্রুতি, প্রদর্শনী বক্তৃতা, আকর্ষণীয় স্লোগান এবং উল্লেখযোগ্য কাগজপত্রের উপস্থাপনা সমস্যা প্রশমিত করার জন্য যথেষ্ট নয়। আমাদের কথাকে কাজে পরিণত করতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার ওপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় আমাদের অবশ্যই ব্যাপক ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সীমানা নেই। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া দাবি করে। আমি আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে উচ্চ গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমনকারী, বহুজাতিক সংস্থা, উন্নয়ন অংশীদার, বিজ্ঞানী, মিডিয়া, নীতি নির্ধারক এবং সুশীল সমাজ এই ক্ষতি মোকাবিলায় সহায়তা প্রদানের জন্য এগিয়ে আসবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় কর্মের সময় এখন এবং বিলম্বের কোন সময় নেই।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার জ্যেষ্ঠ পরামর্শক মানাভা শিবকুমার, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডগলাস সিম্পসন।
ইউআর/