বাংলাদেশ মিউনিসিপ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (বিএমডিএফ) প্রকল্পের আওতায় চলমান কাজের মান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের আওতায় মানিকগঞ্জে চলমান প্রায় পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাটির আরসিসি শোল্ডার ভেঙে খালে পড়ে গেছে। রাস্তার ঢালে প্যালাসাইডিং ধসে চলে গেছে খালের তলায়। অধিকাংশ স্থানে ধরেছে ফাটল। দেবে গেছে একাধিক স্থান। ফলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে যান চলাচল। নির্মাণের দুই মাসের মধ্যে রাস্তার বেহাল দশা হলেও বিল পেতে মরিয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে কাজের অধিকাংশ বিল পেলেও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে জামানতের টাকা আটকে দেওয়ায় মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সড়ক উন্নয়নের দুটি প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রে অংশ নিয়ে ১ নম্বর প্যাকেজে যৌথভাবে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স হোসাইন কন্সন্ট্রাকশন। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে একই বছরের ২ মে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
অভিযোগ রয়েছে, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মাণের মাত্র দুই মাসেই বেহাল দশা প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা সড়কের। এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে নির্মাণ কাজের বিল আটকে দিয়েছেন মানিকগঞ্জ গৌরসভার মেয়র রমজান আলী। এতে ঠিকাদারের রোষানলে পড়েছেন তিনি। বিল আটকে দেওয়ায় ঠিকাদারের লোকজন দুদকসহ বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মেয়রকে হয়রানি করছেন বলেও অভিযোগ করেছেন মেয়র নিজে।
এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় পনেরো কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাটির আরসিসি সোল্ডার ভেঙ্গে খালে গেছে। এছাড়া রাস্তার ঢালে প্যালাসাইডিং ধসে খালের তলায় চলে গেছে। অধিকাংশ স্থানে ধরেছে ফাটল। দেবে গেছে একাধিক স্থানে। ফলে যান চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। নির্মাণের দুই মাসের মধ্যে রাস্তার বেহাল দশা হলেও বিল পেতে মরিয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে কাজের অধিকাংশ বিল পেলেও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে জামানতের টাকা আটকে দেয়ায় মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, রাস্তায় খুবই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। ট্রাক দিয়ে মাটি এনে রাস্তা নির্মাণের কাজ করার কথা থাকলেও রাস্তার পাশ থেকেই মাটি কেটে রাস্তায় ফেলা হয়েছে। ১২ মিলি রডের পরিবর্তে ৮ মিলি রড ব্যবহার করা হয়েছে, যে কারণে রাস্তার অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। নির্মাণ চুক্তিতে ৪ মিটার প্রস্থ থাকার কথা থাকলেও তারা নির্মাণ করেছেন ৩ মিটার। এলাকাবাসীর আপত্তিতেও কোনো কর্ণপাত করেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরা স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করেন না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে নাকি প্রাণনাশের হুমকি দিতো। ফলে প্রাণভয়ে অনেকেই চুপ থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জের পৗর মেয়র রমজান আলী জানিয়েছেন, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখেছি, ওই রাস্তার কাজ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে। এছাড়া রাস্তার ঢালে প্যালাসাইডিং ধসে খালের তলায় চলে গেছে। অধিকাংশ স্থানে ধরেছে ফাটল। এর ফলে যান চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে রাস্তাটি পুনঃমেরামত করে দিতে বলেছি। তারা মেরামত করে দিলে জামানতের টাকা পরিশোধ করা হবে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিছু প্রভাবশালী লোকজন থাকায় তারা নানাভাবে আমাকে হয়রানির চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে দুদকসহ বেশ কয়েক জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে হয়রানির চেষ্টা করছেন বলেও জানিয়েছেন মেয়র।
মেয়র বলেন, এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে কোনো আপস নেই। ঠিকাদাররা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, আমি তাদের অন্যায় আবদার মেনে নেব না।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মা ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেসার্স হোসেন কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার অবশ্যই মানসম্মত হতে হবে। মানহীন কাজ নিয়ে কোনও ছাড় নাই। যেই হোক না কেন দরপত্র অনুযায়ী কাজ না হলে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
ইউআর/