আজ বিশ্ব স্ট্রোক দিবস

‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান’প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আজ ২৯ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব স্ট্রোক দিবস। সারাবিশ্বে মানুষের মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ ধরা হয় স্ট্রোককে। বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে প্রতি ৬ জনে ১ জনের।

স্ট্রোক হওয়ার মূল কারণ মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়া। কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হলেই স্ট্রোক সংঘটিত হয়। আর রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয় রক্তনালি বন্ধ হয়ে কিংবা রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে।

সাধারণত উচ্চরক্তচাপ থেকেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। স্ট্রোকের কারণে মৃত্যু থেকে শুরু করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত কিংবা পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় অনেককেই।

বিশেষজ্ঞরা জানান, স্ট্রোক দুই ধরনের। প্রথমত রক্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে স্ট্রোক হয়। শরীরের ভারসাম্য রাখতে সমস্যা হওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে চোখে কম দেখা, মাথা ঘোরানো, অচেতন হয়ে পড়া, শরীরের এক দিক অবশ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি স্ট্রোকের বিভিন্ন লক্ষণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতিবছর বিশ্বে স্ট্রোকজনিত সমস্যায় ভোগে দেড় কোটি মানুষ। এরমধ্যে প্রায় ৫০ লাখ মৃত্যু হয় স্ট্রোকে। বাকিদের বরণ করে নিতে হয় স্ট্রোক পরবর্তী পক্ষাঘাতজনিত সমস্যাকে। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকলেও শিশুদেরও স্ট্রোক হতে পারে।

এদিকে দেশে ক্রমাগতই বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। এক বছরে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে দেশে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫ হাজার ৫০২ জন। যা বেড়ে ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার ৩৬০ জনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সেবনের প্রবণতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন সচেতনতার ঘাটতিসহ নানা কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ছে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক মো. বদরুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বয়স বাড়লে স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। সে হিসেবে মৃত্যুও বাড়বে। এ ছাড়া ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি বেশি থাকা, ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য গ্রহণ স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। দেশে এসব গ্রহণের হার বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে মানুষের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের প্রবণতা।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময়ে অনেকেই দুশ্চিন্তা ও নানা মানসিক চাপে ছিল। স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধির এটিও একটি কারণ। সে কারণেও ২০২০ সালে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে থাকতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহায়তায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল এর ২০১৮ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, দেশে এখন প্রতি হাজারে স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন ১১ দশমিক ৩৯ জন মানুষ। প্রায় ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে বাংলাদেশে। স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬০ বছরের বেশি মানুষের মধ্যে ৭ গুণ বেশি। নারীর চেয়ে পুরুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। শহরের চেয়ে গ্রামে কিছুটা বেশি স্ট্রোকের প্রকোপ।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img