ফেনী শহরের বারাহিপুর এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ফেসবুকে লাইভে এসে তাহমিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা
এ রায় ঘোষণা করেন। মাত্র ৬০ কার্য দিবসে এই হত্যার বিচার হয়।
৩০২ ধারায় দোষী সাভ্যস্ত করে স্বামী ওবায়দুল হক টুটুলের মৃত্যু দণ্ডাদেশ এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেয় আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফেনী জজ কোর্টের পিপি হাফেজ আহম্মদ বলেন, সকল তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে খুনের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার তাহমিনার বাবা সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘ন্যায়বিচার পেয়েছি, বিচার এবং সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেন, অল্প সময়ে মামলাটির বিচার কাজ শেষ হয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছে। আমরা সুবিচার পেয়েছি।
অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুস সাত্তার বলেন, আমরা সুবিচার পাইনি। সুবিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করবো।
আদালত সূত্র জানায়, মঙ্গলবার তাহমিনা হত্যা মামলায় টুটুলের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন পাবলিক প্রসিকিউটর হাফেজ আহম্মদ ও বাদিপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু। আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন আইনজীবী আবদুস সাত্তার।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি মামলার বাদি নিহতের বাবা সাহাব উদ্দিনের সাক্ষ্যের মধ্যদিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। এই মামলায় ১৭ জনের মধ্যে ১৩ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। ২০ জানুয়ারি থেকে বিচার কার্য শুরু হয়।
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো: ইমরান হোসেন গত ১১ নভেম্বর টুটুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল স্ত্রী তাহমিনাকে কুপিয়ে হত্যা করেন ওবায়দুল হক টুটুল।
পরিবার সূত্র জানা যায়, প্রায় ৫ বছর আগে ফেনী পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড বারাহিপুর এলাকার গোলাম মাওলা ভূঁঞার ছেলে ওবায়দুল হক ভূঁঞা টুটুল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আকদিয়া গ্রামের সাহাব উদ্দিনের মেয়ে তাহমিনা আক্তারকে বিয়ে করেন। তাদের তাফান্নুন আরোয়া মায়োস নামে দেড় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
স্ত্রীকে হত্যার আগে ফেসবুক লাইভে এসে টুটুল সবার কাছে মাফ চান এবং ঘটনার জন্য নিজেই দায়ী বলে স্বীকার করেন। এছাড়া পারিবারিক অশান্তির জন্য স্ত্রীকে দায়ী করেন। তার স্ত্রী পরিবারকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করতেন বলেও দাবি করেন তিনি। ভিডিওতে তার মেয়েকে দেখভালের জন্য সবার কাছে অনুরোধ করেন টুটুল।
উল্লেখ্য, আলোচিত নুসরাত হত্যা মামলার আইনজীবী শাহজাহান সাজু তাহমিনা হত্যা মামলাটিও নিজ খরচে পরিচালনা করেন।