বাংলাদেশকে টিকা উপহার দিবে রোমানিয়া

রোমানিয়া সরকার বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দুই লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার টিকা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।

শুক্রবার রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠককালে সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান অরেস্কু এ কথা জানান।

এ সময় মোমেন বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রোমানিয়ার জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের কৃতজ্ঞ।”

রোমানিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের এই বৈঠকে মোমেন দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে অব্যাহত অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আগামী দিনগুলোতে দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বৈঠকে মোমেন দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, “রোমানিয়ার বিনিয়োগকারীগণ বাংলাদেশে নির্মাণাধীন ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এবং প্রতিষ্ঠিত হাইটেক পার্কগুলোতে যৌথ মালিকানায় কিংবা শতভাগ নিজস্ব মালিকানায় বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ গ্রহণ করতে পারবেন।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সেদেশের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং বোগদান অরেস্কু এই আমন্ত্রণ সাদরে গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রশ্নে রোমানিয়ার সমর্থন প্রত্যাশা করেন। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে রোমানিয়ায় দক্ষ ও অদক্ষ জনশক্তি প্রেরণের সম্ভাব্যতা নিয়েও উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা করেন। তারা দু’দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সম্মতি প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে রোমানিয়া ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এ বিষয়ে বোগদান অরেস্কু বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং রোমানিয়ার পক্ষ হতে সম্ভাব্য সবধরণের সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।

দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশ ও রোমানিয়ার সহযোগিতা সংক্রান্ত বিষয়ে নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকার প্রশংসা করেন। বৈঠক শেষে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মধ্যে এফওসি (ফরেন অফিস কন্সালটেশন) বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

পরে মোমেন পূর্ব-ইউরোপের বৃহত্তম কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় ইউপিবি পরিদর্শন করেন। সেখানে ইউপিবি’র রেক্টরের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে দু’দেশের মধ্যে শিক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় ইউপিবি এবং রোমানিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যে “প্রমোশন অভ দি ইউপিবি এক্সসেলেন্স স্কলারশিপ প্রোগ্রাম” বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন ইউপিবি’র রেক্টর এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। মোমেন এ সময় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি স্কলারশিপ ঘোষণার জন্য ইউপিবি’র রেক্টরকে ধন্যবাদ জানান এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে এই স্কলারশিপ বৃদ্ধি করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইউপিবি’র রেক্টরকে আগামী ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য পিস কনফারেন্সে যোগদানের জন্যে আমন্ত্রণ জানান।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img