উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
আজ শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ইং) সকাল ১১টায় বন্দরটিলা চত্বরে খানাখন্দে ভরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে রাহে ভান্ডার তরুণ আশেকান পরিষদ (রাতআপ) বন্দর শাখা আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে নগরীর ভিআইপি সড়কের ভাঙা সব স্থান সংস্কারের আল্টিমেটাম দিয়ে তিনি বলেন, দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সড়কটি চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক। এ সড়কটি নগরীর ভিআইপি সড়ক হিসেবেও পরিচিত। প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন এবং লাখো মানুষের যাতায়াত এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই এলাকা দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে রাস্তাটি সংকুচিত করে ফেলেছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে উক্ত সড়কে অসংখ্য শতশত ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে রাস্তাটি পুরোপুরি চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কের সাথে রয়েছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, দুটি ইপিজেড, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো, ব্যাংক, নৌ ও বিমান বাহিনীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। শুধুমাত্র দুটি ইপিজেডে কাজ করেন কয়েকলাখ পুরুষ ও নারী শ্রমিক।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা এখন প্রতিদিন স্কুল কলেজে যাচ্ছে। তাছাড়া এখানে রয়েছে একটি কোভিড টিকা কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষের চলাফেরা রয়েছে শুধু এই এলাকায়। কিভাবে একটি মানুষ নিশ্চিন্তে রাস্তায় চলাফেরা করবে অথবা রাস্তা পার হবে সে প্রশ্ন রাখেন সুজন। মানুষ যে ভারী ভারী যানবাহনের চাপায় পড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দিবে? বৃষ্টি শুরু হলে কাদাপানির ভোগান্তি আর বৃষ্টি কমলে শুরু হয় ধুলিঝড়। দেখে মনে হবে যেন একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকার বাসিন্দা এরা। অব্যাহত ধুলিকনায় অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষ। মানুষের ফুসফুসে ক্যান্সার বাসা বাঁধছে। এরকম একটি অমানবিক পরিস্থিতিতে বসবাস করছে ঐ এলাকার জনসাধারন। যাদের কোন স্বাভাবিক জীবনধারা নেই বললেই চলে। ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী লাখো পথচারি এবং যানবাহনের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি যেন শেষ হওয়ার নয়। রোগীকে হাসপাতাল নেওয়ার মূহুর্তে এ পর্যন্ত তিনজন রোগী রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেন। কবে যে এ দুর্ভোগ থেকে তারা মুক্তি পাবে তা কেউ জানেনা। একমাত্র আল্লাহই যেন তাদের একমাত্র ভরসা।
সুজন স্পষ্ট করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে বা যারা গাফিলতি করবে তাদেরকে জনগন কোনদিনও ক্ষমা করবে না।
তিনি সমাবেশস্থল থেকে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস’র সাথে ফোনে কথা বলেন এবং প্রতিদিন ৩বার ঐ সড়কে পানি ছিটানোর আহবান জানান। প্রধান প্রকৌশলী সুজনের প্রস্তাবে সম্মত হন এবং এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা প্রদান করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
এছাড়া রাস্তার দুপাশে জমে থাকা কাদা এবং পানি অপসারনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তিনি আগামী শুক্রবারের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কার করে গাড়ী চলাচলের উপযোগী করে তুলতে ব্যর্থ হলে জনগনের স্বার্থে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন সুজন।
রাতআপ বন্দর শাখার সভাপতি তানভীর ইসলামের সভাপতিত্বে এবং রাতআপ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন নয়নের সঞ্চালনায় এতে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন মহিলা কাউন্সিলর শাহনুর বেগম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নাগরিক উদ্যোগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাজী মো. ইলিয়াছ, সদস্য সচিব হাজী মো. হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ওয়াহিদ হাসান, রাতআপ কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি শাহজাদা সাইফুল আলম নাইডু, বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ কামরুল হোসেন, পতেঙ্গা থানা আওয়ামী লীগ নেতা সমীর মহাজন লিটন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সদস্য ওয়াসিম আকরাম, মো. শাহজাহান, এডভোকেট বরকত উল্লাহ খান, পতেঙ্গা থানা ছাত্রলীগ সভাপতি হাসান হাবিব সেতু প্রমুখ।
মানববন্ধনে এলাকাবাসীসহ বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ, ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ ডিগ্রি কলেজ সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থী সংহতি প্রকাশ করেন।