তথ্য মন্ত্রণালয় ওটিটি প্লাটফর্ম বিষয়ে নীতিমালার খসড়া প্রস্তুত করেছে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী একথা জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ ‘রেগুলেটরি জব’; নীতি, নীতিমালা তৈরি করে এই গণমাধ্যমের ক্রমবিকাশকে এগিয়ে নেয়া। ওটিটি প্লাটফর্ম এটি একটি ক্রমবর্ধমান বাস্তবতা। কিন্তু ওটিটি প্লাটফর্মে সিনেমা, নাটক, ওয়েব সিরিজ বা কোনো কন্টেন্ট রিলিজ করতে হলে এখনও অনুমোদনের ব্যবস্থা নেই। আমি সাম্প্রতিক ভারত সফরে সেখানকার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর সাথে তারা কিভাবে বিষয়টিকে দেখভাল করছে সেবিষয়ে আলাপ করেছি। করছে। তারা গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন আকারে একটি নীতিমালা জারি করেছে, সেখান থেকে পরিচালিত সমস্ত ওটিটি প্লাটফর্মকে এই নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। সেই নীতিমালার ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা ইতোমধ্যেই নীতিমালার প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছি। সেই নীতিমালা খুব সহসা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
ওটিটি প্লাটফর্মের কন্টেন্ট এতো বিস্তৃত এবং ব্যাপক যে, সেন্সর বোর্ডের মাধ্যমে সেন্সর করা দুরূহ কাজ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘কারণ বছরে ৫০টি বা ১০০টি সিনেমা রিলিজ হয়, সেটি সেন্সর করা সহজ। কিন্তু ওটিটি’র হাজার কন্টেন্ট সেন্সর করা সহজ কাজ নয়। সেকারণে ভারতসহ অন্যান্য দেশে যেভাবে করা হচ্ছে সেভাবে আমরা একটি নীতিমালা খসড়া তৈরি করেছি যা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করবো। এটা এজন্য যাতে করে আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সমাজ ও মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে, বিজাতীয় সংস্কৃতি উৎসাহিত হয় কিম্বা আমাদের তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে, এমন কোনো কন্টেন্ট সেখানে না যায়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে এসময় ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বর্তমানে গণমাধ্যমের সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যুক্ত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মানুষকে মতপ্রকাশের অবারিত সুযোগ করে দিয়েছে, একইসাথে অনেক ক্ষেত্রে সমাজে নানাধরণের অস্থিরতা তৈরি, সরকার ও ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর সুযোগ হিসেবেও এটির ব্যবহার লক্ষণীয়। মূলধারার গণমাধ্যমগুলো সঠিকভাবে কাজ করেছে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ-বিদেশ থেকে করোনাকালেও অনেক গুজব রটানো এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয় এই ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার জন্য অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, আইপি টিভি’র রেজিস্ট্রেশন দেয়া শুরু করাসহ অনেকগুলো কাজ ইতিমধ্যেই করেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিদেশে বসে বিভিন্ন ব্যক্তি বিশেষ নির্দিষ্ট কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে মাঝে মধ্যেই নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এই ক্ষেত্রে দেখা যায়, যারা সার্ভিস প্রোভাইডার তাদের কাছ থেকে যে ধরণের সহযোগিতা পাওয়া প্রয়োজন সবসময় সে ধরণের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। এজন্য আমরা সার্ভিস প্রোভাইডারদের সাথে যেমন আলোচনা করছি একইসাথে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে সমস্ত ব্যক্তি বিশেষ বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে যে সমস্ত দেশ থেকে এই অপপ্রচারগুলো চালায় সেই সমস্ত দেশের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এসময় উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে প্রচন্ড আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। আমরা তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেটির প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম এবং আমরা জানিয়েছিলাম যে, এটি যদি সংশোধন করা না হয়, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ‘রিপোর্টার্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্সের অফিস ফ্রান্সের প্যারিসে। ফরাসি আইনজীবীর মাধ্যমে তাদেরকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ফরাসি আইন অনুযায়ী এমন কি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইন অনুযায়ী এভাবে ব্যক্তি বিশেষকে কটাক্ষ করে কিম্বা টার্গেট করে অহেতুক যে ধরণের রিপোর্ট তারা প্রকাশ করছিল, সেটি করতে পারে না। ফরাসি আইনের সেই ধারা উল্লেখ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট আইনের উল্লেখ করে তাদেরকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি যে, অন্যান্য দেশ থেকেও যারা এ সমস্ত কাজগুলো করছেন তাদের বিরুদ্ধেও একই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত নির্বাচনগুলোতে বিএনপি’র ভুলের পুণরাবৃত্তি তাদের জন্য আত্মহননমূলক
সাংবাদিকরা এসময় বিএনপি’র ‘নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র ভুলের পুণরাবৃত্তি তাদের জন্য আত্মহননমূলক হবে। কারণ, বিএনপি একথা ২০১৪ সালের নির্বাচনের বহু আগে থেকেই বলে আসছিল এবং ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করার জন্য তারা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল, ৫শ’ ভোট কেন্দ্র জ্বালিয়ে দিয়েছিল, ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের নতুন বই পুড়িয়ে দিয়েছিল এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ বহু মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপরও তারা নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি, দেশে নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও তারা এ ধরণের হুমকি ধামকি দিয়েছিল, পরে অংশগ্রহণ করেছিল। আমি মনে করি, ২০১৮ সালের নির্বাচনকে শুরু থেকেই তারা সিরিয়াসলি নিয়ে যদি অংশগ্রহণ করতো হয়তো আরো ভালো ফলাফল করতে পারতো। নির্বাচনের বাকি যখন সোয়া দুই বছর বা তার চেয়ে বেশি, তখন একই ধরণের তর্জন-গর্জন আমরা দেখতে পাচ্ছি। বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে যে ভুল তারা করেছে, সেই ভুলের পুণরাবৃত্তি করলে বিএনপি যে ছোট হয়ে আসছে সেটি আরো ছোট হয়ে যাবে।