গেল কিছুদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে ইশকুল খুইলাছে রে মাওলা শিরনামের এই গানটি। দেড় বছর যাবত স্কুল বন্ধ থাকার পর আজ থেকে সব স্কুল খোলার নির্দেশ পাওয়ার পর যেন সেই আনন্দ আরও কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে এই গানটি। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাংলা গানের ব্যান্ড দল জলের গানের কাভারে মুক্তি পেয়েছে তাদের নতুন এই গানটি।
এই গানটির মূল গীতিকার ও প্রথম পরিবেশক বাংলা লোকগানের অন্যতম কিংবদন্তি রমেশ শীল বা রমেশ মাইজভাণ্ডারী। এই কিংবদন্তি সুফি মাইজভাণ্ডার সাধক ছিলেন। ১৮৭৭ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের বোয়ালখালি থানার অন্তর্গত গোমদন্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম সুফি ভাববাদী ঘরানার ‘ইশকুল খুইলাছে’ গানটি। যদিও লোকগান গবেষকরা জানান, মাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীনই চিরতরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রমেশের স্কুল। তবে ভাব ও সংগীত সাধনার স্কুল আজীবন খুলে রেখেছিলেন এই কিংবদন্তি। ভাববাদের ‘ইশকুলে’ তার অনুসারীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। ১৯৬৭ সালে মারা যান তিনি।
মাইজভাণ্ডারী সংগীদের এই কিংবদন্তি শিল্পী ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং সেই সাথে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন পরবর্তী নুরুল আমিন বিরোধী আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তাছাড়া তার সমগ্র সংগীত সাহিত্যে ছিলো গণমানুষের পক্ষের রাজনৈতিক সচেতনতা। নুরুল আমিন সরকারের তীব্র সমালোচনা আর ব্যাঙ্গাত্মক গান রচনা করে করে এই কবিয়াল জেলও খেটেছিলেন সেসময়।
রমেশ শীল জীবনের শেষ দুই দশকে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রচুর সংবর্ধনায় সম্মানিত হন। ১৯৫৮ সালের ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে সহবন্দীদের আয়োজিত জন্মদিনের সংবর্ধনা, ১৯৬২ সালের ঢাকার বুলবুল একাডেমি প্রদত্ত সংবর্ধনা, ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের নাগরিক সংবর্ধনা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।