আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারে কাবুলজুড়ে বন্দুকের গুলি ছুড়ে উদযাপন করেছে তালেবান যোদ্ধারা। মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) ভোর হওয়ার আগেই কাবুল বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ পায় তালেবান। এক জ্যেষ্ঠ তালেবান নেতা বলেন, আমরা ইতিহাস নির্মাণ করেছি।
দুদশকের লড়াই শেষে সোমবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তালেবানের জ্যেষ্ঠ নেতা আনাস হাক্কানি বলেন, আমরা খুবই খুশি যে ২০ বছরের জিহাদ, আত্মত্যাগ ও কষ্টের পর এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অস্পষ্ট ভিডিওতে দেখা যায়, মধ্যরাতের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ সামরিক পরিবহন বিমানটি উড়ে যাওয়ার পর তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরে ঢুকছেন। তালেবান মুখপাত্র কারি ইউসুফ বলেন, সর্বশেষ সেনা কাবুল ছেড়ে গেছেন। আমাদের দেশ পরিপূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
রয়টার্স, আল-জাজিরা ও ডন অনলাইন এমন খবর দিয়েছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি কাবুল বিমানবন্দরের হুমকিকে বাস্তবিক ও সুনির্দিষ্ট বলে আখ্যায়িত করলেও তালেবানের বিশ্বাস, বিদেশি বাহিনী প্রত্যাহারে হামলা বন্ধ করে দেবে আইএস।
তালেবান মুখপাত্র জবিহুল্লাহ বলেন, যদি তারা কোনো যুদ্ধাবস্থা তৈরির চেষ্টা করে তবে তাদের মোকাবিলা করা হবে। তার মতে, যেসব আফগান আইএসের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়েছে, বিদেশিদের অনুপস্থিতিতে একটি ইসলামিক সরকার গঠন দেখে তারা নিজেদের অভিযান প্রত্যাহার করে নেবেন।
এক সংবাদ সম্মেলনে পেন্টাগন বলেছে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলার পর গত দুদশকের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন সেনার উপস্থিতি নেই আফগানিস্তানে।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের সমাপ্তি ঘিরে তৈরি হওয়া আবেগঘন পরিবেশকে ‘হৃদয় বিদারক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন মার্কিন মেরিন জেনারেল ফ্রাংক ম্যাকাঞ্জি। এর আগে আমেরিকান নাগরিক ও ঝুঁকিপূর্ণ আফগানদের সরাতে অক্লান্ত ও বিপজ্জনক পরিশ্রম করতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের।
মার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল ম্যাকাঞ্জি বলেন, এই প্রত্যাহারের সঙ্গে অনেক হৃদয়বিদারক ঘটনা জড়িত। আমরা সবাইকে সরিয়ে আনতে পারিনি। যদিও তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসতে চেয়েছিলাম।
আফগানিস্তানে মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিক রস উইলসন কাবুল বিমানবন্দরের সর্বশেষ সি-১৭ সামরিক পরিবহন ফ্লাইটে ওঠেন। তখন রাত এগারোটা ৫৯ মিনিট। তার সঙ্গে মার্কিন সামরিক বাহিনীর ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের কমান্ডিং জেনারেলরাও ছিলেন।
গত ১৪ আগস্ট থেকে কাবুল থেকে এক লাখ ২২ হাজার মানুষকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হয়, ২০০১ সালে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে হামলার নেপথ্যে থাকা আল-কায়েদা জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিল তালেবান। দীর্ঘ দুদশকের লড়াই শেষে তারা ফের আরও শক্তিশালীভাবে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতে পেয়েছে।
ম্যাকাঞ্জি বলেন, যদি আমরা আরও ১০টি দিন বেশি থাকতাম। তবুও সবাইকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম না। মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারকালে তারা ৭০টি বিমান, কয়েক ডজন সাঁজোয়া যান ধ্বংস করে দিয়েছে। এছাড়া চলে আসার আগে আইএসের রকেট হামলা থেকে বিমানবন্দরকে রক্ষা করা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও অকার্যকর করে দিয়ে এসেছে।
তালেবান যে এভাবে এত দ্রুত বিজয় লাভ করবে, তা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন ও ন্যাটো মিত্ররা। কাবুল পতনের পরে মার্কিন বাহিনীকে তাড়াহুড়ো করে দেশটি ছেড়ে আসতে হয়েছে। এতে আফগান যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা করা কয়েক হাজার আফগানকে ঝুঁকির মুখে ফেলে এসেছে তারা। বিপজ্জনক অবস্থায় থাকা এসব আফগান নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে লোকজনকে জরুরিভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ করা হয়েছে। তালেবানের সঙ্গে পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুক্তি অনুসারে সেনাপ্রত্যাহারের দায়িত্ব পড়েছিল বাইডেনের ঘাড়ে। কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই সেনাপ্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।