মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ, এএসপিসহ ৫ পুলিশ কারাগারে

মা ও ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ চাওয়ার অভিযোগে দিনাজপুরে আটক পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এএসপিসহ ৫ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে দিনাজপুর আমলী আদালতের (চিরিরবন্দর-৪) বিচারক শিশির কুমার বসু তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এছাড়া আদালত অপহরণের শিকার জহুরা বেগম ও তার ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার পর বিচারকের আদেশের ভিত্তিতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এর আগে মঙ্গলবার প্রথমে রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবির, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনস্টেবল আহসানুল হক, তাদের গাড়িচালক হাবিব মিয়াকে এবং পরে যার অভিযোগের ভিত্তিতে মা-ছেলেকে তুলে নেওয়া হয় সেই দিনাজপুর সদর উপজেলার ফসিহ উল আলম পলাশকে আটক করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের গাদুশা পাড়ার জনৈক চ্যালেঞ্জ মৌলানার ছেলে লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার দিবাগত রাতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার কবির সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক, ফসিউল আলম পলাশ ও হাবিব মিয়া লুৎফরের বাড়িতে যান। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান।

সন্তানসহ জহুরা বেগম নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বাড়ির লোকজন র‌্যাব, ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেন। কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে তাদের জানান। পরে অপহরণকারীরা মোবাইলে জহুরা বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজানের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ ঘটনায় পরের দিন মঙ্গলবার সকালে লুৎফর রহমানের ভাই খলিলুর রহমান চিরিরবন্দর থানায় ৬ থেকে ৭ জনের নামে অভিযোগ করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অপহরণকারীদের কথামতো মঙ্গলবার বিকালে হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মুক্তিপণের টাকা দিতে যান স্বামী লুৎফর রহমান ও দেবর রমজান আলী। তদের সঙ্গে সিভিল পোশাকে পুলিশ রয়েছে টের পেয়ে অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ১০ মাইল নামক স্থানে জনতা ও পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। অভিযানে জেলা পুলিশ ও চিরিরবন্দর থানার পুলিশ অংশ নেয়। ঘটনার পর তাদের ডিবি অফিসে রাখা হয়। অপহৃত মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকেও ডিবি অফিসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হয়।

চিরিরবন্দর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার জানান, আগে থেকে ওত পেতে থাকা দিনাজপুর জেলা পুলিশ ও দিনাজপুর সিআইডি মিলে বাশেরহাট থেকে এএসপি সারোয়ার কবির, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনস্টেবল আহসানুল হক ও তাদের গাড়িচালক হাবিব মিয়াকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে লুৎফর রহমানের ভাই খলিলুর রহমান চিরিরবন্দর থানায় ৬ থেকে ৭ জনের নামে অভিযোগ করেন। বুধবার অভিযোগটি মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়।

এ ব্যাপারে বুধবার দিনব্যাপী দিনাজপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকের কাছে মুখ খোলেননি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেছেন, অভিযুক্তরা কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়ে সেখানে (চিরিরবন্দর) গেছেন। তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেছে, কাকে অপহরণ করেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img