আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অন্তত ৯০০ কোটি ডলার মজুত আছে। এই অর্থ তালেবানের নাগালের বাইরে। যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, এই অর্থ জব্দ করে রাখা হলেও কোনোভাবেই তা তালেবানদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না।
৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রাখা ছিল। এ অর্থগুলোই বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে আছে।
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলেও দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না তালেবান। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান ব্যাংক বা ডিএবির নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই তালেবানের হাতে দেবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ এখন ৯০০ কোটি ডলারের, যেটার বেশির ভাগের নিয়ন্ত্রণ আমেরিকার হাতে। শুধু তাই নয়, তালেবানের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার পর কোটি ডলারের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক ঋণ আর অর্থ সহায়তাও হুমকির মুখে পড়েছে। ডিএবির সাবেক গভর্নর জানায়, আফগানিস্তানের অর্থনীতিতে ধস নামবে শিগগিরই। সাবেক গভর্নর আজমল আহমাদি জানান, তালেবান এখনো আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছে। দেশের সম্পদ জব্দ থাকবে কিন্তু তালেবানের হাতে যাবে না।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দুই দশক পর ক্ষমতায় ফিরেছে গোষ্ঠীটি। বিস্ময়কর গতিতে তালেবান দেশটিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার গঠনেরও। তবে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাজার কোটি ডলার সম্পদের বেশির ভাগই তালেবানের নাগালের বাইরে থেকে গেছে। এ সম্পদে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সহজ হবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান ব্যাংকের ভল্টে বৈদেশিক মুদ্রা, স্বর্ণ ও অন্যান্য সম্পদ আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও ঠিক কি পরিমাণ সম্পদ সেখানে গচ্ছিত আছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদিও এ সম্পদের বেশির ভাগই আফগানিস্তানের বাইরে রাখা হয়েছে। এ কারণ ডিএবির হাজার কোটি ডলারের সম্পদের বেশির ভাগই তালেবানের নাগালের বাইরে রয়েছে।
এক টুইটবার্তায় ডিএবির গভর্নর আজমল আহমদী জানিয়েছেন, গত রোববার তিনি ব্যাংকের দায়িত্ব ডেপুটিদের ওপর ছেড়ে দেন। ওইদিন প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা কাবুল ছাড়ার পর তিনিও দেশত্যাগ করেছেন। এর আগে শনিবার তালেবান এক বিবৃতিতে বলেছিল, সরকারি কোষাগার, পাবলিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিসগুলো দেশের সম্পদ। এগুলো কঠোরভাবে পাহারা দেওয়া উচিত।
অনলাইনে পোস্ট করা সাম্প্রতিক আর্থিক বিবৃতিতে দেখা গেছে, ডিএবির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে ১৩০ কোটি ডলার মূল্যের স্বর্ণ ও ৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা মজুত আছে। আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল ২৩ আগস্টের মধ্যে। এই ঋণ সহায়তাও আটকে গেছে। সাধারণত উন্নয়নশীল দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদগুলো ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক কিংবা ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত থাকে।
ডিএবির জুনের বিবৃতিতে বলা হয়, ব্যাংকের মালিকানায় ৬১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ ছিল। সর্বশেষ এ প্রতিবেদনে বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও আগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বিনিয়োগের বেশির ভাগই মার্কিন ট্রেজারি বন্ড ও বিলের আকারে ছিল।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আফগানিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের সম্পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ অর্থ তালেবান নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতে যাওয়া ঠেকাতে দেশটিতে নগদ অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা ডিএবির কোনো সম্পদ তালেবানের হাতে যাবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে।
জুনে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও ২০২১ সালে ডিএবির আন্তর্জাতিক রিজার্ভ ৯৫০ কোটি ডলার অনুমান করেছিল। তবে ৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলার মূল্যের ডিএবির বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও শাখার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে রাখা ছিল। এ অর্থগুলোই বর্তমানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণে আছে।