বোয়ালখালীতে ইয়াছমিন আকতার এ্যানী (২৪) নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে হত্যা মামলার প্রধান আসামী স্বামী বাবুল দে (৩০) কে আটক করেছে পুলিশ।
উপজেলার শ্রীপুর খরণদ্বীপ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জ্যোষ্টপুরার রণজিত দের ঘরে এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে অভিযান চালিয়ে গৃহবধূকে হত্যার পর সৎকারের নামে মুসলিম মেয়েকে পুড়িয়ে আলামত নষ্টের মুলহোতা স্বামী আটক করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত গৃহবধুর মা রোকসানা বেগম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের বিজ্ঞ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বামীসহ ১৮ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন।
এতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকারম ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে মামলা রজু করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বোয়ালখালী থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতে দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বাদী রোকসানা বেগমের বড় মেয়ে ইয়াছমিন আকতার এ্যানী পরিবারের অভাব অনটনের কারণে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে নিহত ইয়াছমিন বন্দরটিলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার স্বামী বাবুল দে (৩০) ওই এলাকায় পূজা নামক একটি সেলুনে কাজ করতেন। নিহত এ্যানী কর্মস্থলে যাওয়া আসার পথে তাদের পরিচয় হয়। বাবুল হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্বেও তার ধর্মপরিচয় গোপন রেখে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এ্যানীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে এ্যানীকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার শুরু করেন। তাদের সংসারে ইশা নামের দেড় বছরের একটি কন্যা সন্তানের জম্ম হয়।
বিয়ের পর এ্যানী জানতে পারেন, বাবুল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বিষয়টি জানার পর নিহত এ্যানী চরম অনিশ্চতায় ছিলেন বলে তার বন্ধু বান্ধব ও নিকট অত্মীয়দের মোবাইল ফোনে জানান। পরে এ্যানী তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার অসহায়ত্বের সুযোগে তাকে জোরপূর্বক হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেন বাবুল ও তার পরিবার। মৃত্যুর তিন দিন আগে এ্যানী তার খালতো বোন হাসিকে জানান যে তার স্বামী বাবুল দে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবেন। তাই তিন হাজার টাকা প্রয়োজন। বিষয়টি তার মাকে জানাতে বলেন এ্যানী। তার মা টাকা দিতে অপারগ জানালে তার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন এবং তা বন্ধ করে দেন।
পরে গত ৩ আগস্ট বিকেল ৩টার দিকে নিহত এ্যানীর স্বামী বাবুল মুঠোফোনে হাসিকে জানান, এ্যানী মারা গেছেন। হাসি এ্যানীর পরিবারকে খবরটি দেন। এ্যানী স্ট্রোক করে মারা গেছেন বলে স্বামী জানান। এ্যানীর মা লাশ নিতে গ্রামের বাড়ি থেকে রওনা দেবেন বলে জানান। কিন্তু ওই রাতেই বাবুলের ভাই পরিচয়ে একজন ফোন দিয়ে এ্যানীর মাকে যেতে মানা করেন।
তাকে জানানো হয়, স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় লোজনের পরামর্শে লাশ সৎকার করা হয়েছে। একজন মুসলিম মেয়েকে কীভাবে সৎকার করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার, চৌকিদার এবং প্রতিনিধিদের পরামর্শে লাশ আগুনে পুড়িয়ে সৎকার করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১-১৮ নম্বর আসামিরা ইয়াছমিন আকতার এ্যানীকে হত্যার পর হত্যার দায় থেকে বাঁচতে অপকৌশলে তড়িঘড়ি করে লাশ আগুনে পুড়িয়ে আলামত বিনষ্ট করেছেন। বাদী তৎক্ষণাৎ মোংলা থানায় যোগাযোগ করলে মোংলা থানা পুলিশ বোয়ালখালী থানায় যোগাযোগ করতে বলেন। বাদী ৫ অগস্ট বোয়ালখালী থানায় যোগাযোগ করলে আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের পরামর্শ দেন। নিহতের মা অত্যন্ত অসহায় ও হতদরিদ্র হওয়ায় তার পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাইন্ডেশন আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালতে এ মামলা দায়ের করে।
এ বিষয়ে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল করিম বলেন, আদালতের নির্দেশে বোয়ালখালী থানায় মামলা রুজু করে মামলার এজাহার ভুক্ত প্রধান আসামি বাবলু দে (৩০)কে আটক করা হয়েছে অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।