দিল্লি হয়ে উঠেছে যেন এক মৃত্যুকূপ। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ হারাচ্ছেন প্রিয় মানুষকে। স্বজন হারানোর আহাজারে প্রকম্পিত হচ্ছে চারপাশ। হাসপাতালের চিত্রগুলো ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির। যেখানে কান পাতলেই শোনা যায় স্বজনহারাদের আর্তনাদ।
দিল্লির হাসপাতালগুলোর একেকটি শয্যা যেন এখন সোনার হরিণ। শয্যার আসায় আক্রান্ত স্বজনদের নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন অনেকে।
তবে, সরকারি কিংবা বেসরকারি সব হাসপাতালের বাইরে নোটিশে লাগানো বার্তা নেই শয্যা, নেই অক্সিজেন। বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বাইরেই যে যেভাবে পারছেন অবস্থান করছেন। চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে সেখানেই।
এদিকে, প্রতিদিন মরদেহের চাপ বাড়ছে কবরস্থান ও শ্মশানগুলোতে। অনেক কবরস্থানে কবর দেয়ার জায়গাও ফুরিয়ে এসেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির সূত্র অনুসারে, করোনায় দিল্লির স্বাস্থ্য খাত পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এ সংকটের অবসান কবে হবে, কবে আবার দিল্লির মানুষ মুক্ত বাতাস গ্রহণ করবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, রোববার (২৫ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মারা গেছেন ১৩ হাজার ৩৯০ জন এবং নতুন করে ৮ লাখ ২১ হাজার ৬৭৪ জনের শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বিশ্বে মোট করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩১ লাখ ১২ হাজার ৭৫২ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার ৩৮৯ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১২ কোটি ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৮ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ জনের।
আক্রান্তে দ্বিতীয় ও মৃত্যুতে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৬৯ লাখ ৫১ হাজার ৭৬৯ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৯২ হাজার ৩১৯ জন।
এনডিটিভি সূত্র অনুসারে ভারতজুড়ে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণের মধ্যেই অক্সিজেনের তীব্র সংকট এবং চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোভিড প্রবণ ১১টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুক্রবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় সংক্রমণ রুখতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন মোদি।
এ ছাড়া বৈঠকে অক্সিজেন সংকটের জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ আনেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জবাবে, জাতির সংকটময় মুহূর্তে বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী মোদি।