করোনাকালে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ ও প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষদের অবিলম্বে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং কৃষি ও শিল্পসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে জরুরি আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আজ শনিবার (২৪ এপ্রিল) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানিয়েছে দলটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, চলমান লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অসচ্ছ্বল মানুষকে সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার এ পর্যন্ত নতুন করে মাত্র সাড়ে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব বলেছেন, সব জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এই সহায়তা দেওয়া হবে। দরিদ্র, দুস্থ ও অসচ্ছল মানুষের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ একেক রকম হবে। তবে প্রথমবার ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে যে হরিলুট হয়েছে সেসব চিত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় গতবছর ৫৯ লাখ দরিদ্র পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছিল আর্থিকভাবে পর্যুদস্ত বিএনপি।
ফখরুল বলেন, গত ১৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৩৬ লাখ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন। ৩৬ লাখ পরিবারের মধ্যে ৩৫ লাখ পূর্বঘোষিত। বাকি এক লাখ পরিবার কৃষক, যারা সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত। ৩৫ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা এবং কৃষকদের এক লাখ পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত নিম্ন আয়ের পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৮৮০ কোটি এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ৫০ কোটি টাকা আগেই বরাদ্দ ছিল। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে করোনা মহামারির প্রথম ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ পরিবারের নগদ সহায়তা হিসেবে দুই হাজার ৫০০ টাকা করে বিতরণের ঘোষণা করা হলেও সেই অর্থ পায় ৩৫ লাখ পরিবার। বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ২৫৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে অবশিষ্ট অর্থ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধা দিলে ওই অর্থ অবিতরণকৃত থেকে যায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর বৈশ্বিক মহামারি করোনাৱভাইরাসের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে। গত ১৭ মাসের এই দীর্ঘ সময়েও করোনা প্রতিরোধে ন্যূনতম ব্যবস্থাপনা পরিকৌশল গড়ে তুলতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার। প্রথমবার করোনার প্রকটতা অজানা থাকার কারণে সম্যক প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি বলে দাবি করা হয়। কিন্তু এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তো আর তা বলা যাবে না।
বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, বিগত এক বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগাম সমন্বিত বৈজ্ঞানিক পরিকল্পনা বা একটি কার্যকর রোড ম্যাপ প্রণয়ন করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বিলম্বে এসেছে। সরকার আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের অনেক সময় পেয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। সরকার এ সময় শতবার্ষিকী উদযাপনসহ নানান জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানমালা নিয়ে ব্যস্ত ছিল। করোনার মধ্যেই বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন করা হলো। পর্যটনের ক্ষেত্রেও লোকজনকে সীমিত করা হলো না।
সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকার জনগণের কল্যাণের তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নেই ব্যস্ত ছিল বেশি। করোনা মোকাবেলায় প্রধান যে খাত- স্বাস্থ্যসেবা- সে খাতে গত ১ বছরেও সক্ষমতা বাড়েনি, বেড়েছে দুর্নীতি। এ সময় দুর্নীতির সর্বসীমা অতিক্রম করেছে এ সরকার। এর মধ্যে ঢাকায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত করোনা ফিল্ড হাসপাতালটি কীভাবে উধাও হয়ে গেল তা জনগণ জানতে চায়।
মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের করোনা হাসপাতাল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। বলেন, মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটের একই ভবনে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চালু করোনা হাসপাতালটি অলস ও অব্যবহৃত রেখে একই ভবনের অন্য তলায় আড়ম্বরপূর্ণভাবে পুনরায় নতুন একটি করোনা হাসপাতাল চালু করার অর্থ কি, জনগণ জানতে চায়। স্বাস্থ্যখাতের চরম অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির মহোৎসবের সঙ্গে সাম্প্রতিক এই দুর্নীতির কাহিনী সকলকে হতবাক করেছে। যারা মনিটরিং করবে সেই সর্ষেই ভূত থাকলে দুর্নীতির কি কোনো পরিসীমা থাকে?
ফখরুল বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা বারবার করোনা মোকাবেলায় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা এমনকি প্রয়োজনে ‘স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ জারির বিষয়েও ভেবে দেখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। ২০২০’র এপ্রিলে প্রথম শাটডাউনের শুরুতেই বিএনপি থেকে বিভিন্ন খাতে ৮৭ হাজার কোটি টাকার সুনির্দিষ্ট প্যাকেজ প্রণোদনার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। সে পরামর্শ গ্রহণ দূরে থাক, উল্টো সরকারের শীর্ষ নির্বাহীর অংশগ্রহণে হাজার হাজার মানুষের জনসমাগম ঘটিয়ে আতশবাজি পোড়ানো, ভোট লুটের আয়োজনসহ নানা অনুষ্ঠান করে বেরিয়েছে।
বলা হয়, ‘লকডাউনের নামে অপরিকল্পিত সাধারণ ছুটি’ দিয়ে সমগ্র দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেশকে একটি স্থায়ী ‘করোনার নিরাপদ আবাসভূমিতে’ রূপান্তরিত করা হয়েছে। সর্বশেষ এ বছর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে যখন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়ান্ট শনাক্ত হল সেটাও সরকার গোপন করে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিদেশি অতিথিদের ডেকে এনে জনসমাগমধর্মী অনুষ্ঠান করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে করোনাকালে খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ ও প্রকৃত নিম্ন আয়ের মানুষদের অবিলম্বে খাদ্য ও নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান এবং কৃষি ও শিল্পসহ অনানুষ্ঠানিক খাতের জন্য জরুরি আর্থিক সহযোগিতা দিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।