বয়স অনুসারে যতক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন

দিনের বেলা কর্মক্ষেত্রে ঝিমুনি আসলে আপনি হয়তো ভাবেন যে: রাতে যথেষ্ট ঘুমিয়েছি, তারপরও ঘুম পাচ্ছে কেন? এরপর আপনার মনেও অন্যদের মতো এ প্রশ্ন আসতে পারে: আসলে আমার রাতে কত ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন?

ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তর্গত কেক স্কুল অব মেডিসিনের পালমোনারি-ক্রিটিক্যাল কেয়ার-স্লিপ মেডিসিন বিভাগের ক্লিনিক্যাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক রাজ দাসগুপ্ত বলেন, ‘একজন মানুষের কতক্ষণ ঘুমানো দরকার তার উত্তর সহজে দেয়া যায় না। কতক্ষণ ঘুমানো প্রয়োজন তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু সাধারণ সুপারিশকৃত পরিসর হলো- প্রতিরাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা। বয়স অনুসারেও সুপারিশকৃত পরিসর রয়েছে।’

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল সায়েন্সেসের পোস্টডক্টরাল স্কলার ক্রিস্টিনা চিক বলেন, ‘একটা মানুষের জীবনকালের বিভিন্ন ধাপে ঘুমের প্রয়োজন ভিন্ন হয়।’

* সিডিসির ঘুম বিষয়ক নির্দেশনা

যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, কিন্তু প্রতি ৩ জনের একজনে এমনটা করে না।

ঘুমের ঘাটতির সঙ্গে নানারকম দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে। ঘুমের অভাবে হৃদরোগ, রক্তনালীর রোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও স্মৃতিভ্রংশতার ঝুঁকি বাড়ে। একটি সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, একদিনের ঘুমের ঘাটতিও সুস্থতার ক্ষতি করতে পারে। ডা. রাজ বলেন, ‘যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না তাদের উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বেশি। ঘুমের ঘাটতির স্বল্পস্থায়ী পরিণতি ও দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি উভয় রয়েছে। একারণে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে।’

* শিশু-কিশোরেরা যতক্ষণ ঘুমাবে

শিশুরা বেশি বেশি ঘুমালে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং এটাই ভালো। প্রথম বছরে শিশুরা ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে, জানান ডা. রাজ। ডা. চিক বলেন, ‘৪ থেকে ১২ মাসের শিশুদের ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের দরকার আছে।’ ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের ১১-১৪ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন আছে, বলেন মায়ো ক্লিনিকের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোলজির সহযোগী অধ্যাপক ভানু কোলা। তিনি আরো জানান, ‘৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০-১৩ ঘণ্টা এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ৯-১২ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিশোর-কিশোরীদের প্রতিরাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।’

শিশুরা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হলে দেরিতে ঘুমাতে পছন্দ করে, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল জেগে ওঠতে হয়। ফলে তারা যে ঘুমের ঘাটতিতে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. রাজের মতে, ‘ঘুমের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঘুমের মানও বজায় রাখতে হবে।’

গভীর ঘুম সারাদিন জ্ঞানীয় কাজগুলো করতে সাহায্য করে, যেমন- মনোযোগ ধরে রাখা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক মনে পড়ে ও সৃজনশীলতা বা উৎপাদনশীলতা বাড়ে। ঘুমের পরিমাণ ঠিক থাকার পরও ক্লান্তি লাগলে বুঝতে হবে যে ঘুমের মান বজায় ছিল না। ঘুমের মধ্যে আমরা কিছু স্টেজে চলে যাই, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন ঘুম না হলে এসব স্টেজে পৌঁছানো অসম্ভব হতে পারে। ঘুমের স্টেজগুলোতে পৌঁছলে দিনের বেলা শরীর ও মন দুটোই সতেজ থাকে। ডা. রাজ বলেন, ‘আমরা ঘুমের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করে থাকি, কিন্তু কিশোর-কিশোরী বা স্কুল পড়ুয়াদের মেজাজ ঠিক রাখতে ঘুমের পরিমাণ ও মান উভয়দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’

* কলেজ পড়ুয়া ও প্রাপ্তবয়স্করা যতক্ষণ ঘুমাবেন

কলেজ পড়ুয়া অনেকেরই চুলে চিরুনির আচড় ঠিকমতো পড়ে না। কারো কারো চোখের নিচে ফোলা বা ঘুমের রেশ লেগে থাকে। এর কারণ, হলো তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে এবং সকালে অ্যালার্মের শব্দ শুনে কাঁধে কোনোমতে ব্যাগটা ঝুলিয়ে চলে আসে। এমনকি তারা সকালের খাবারটা পর্যন্ত ঘরে খেতে চায় না। এমনটা দিনের পর দিন চলতে থাকলে স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব পড়বে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ডা. রাজ এটাকে ভালো চোখে দেখেন না। তিনি এবং ডা. কোলা কলেজ পড়ুয়া ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে কলেজ পড়ুয়াদের প্রায়সময় ৯ ঘণ্টাই ঘুমানো উচিত। ডা. চিকের কথায় এর সমর্থন পাওয়া যায়, ‘তরুণদের মস্তিষ্ক বিকাশমান রয়েছে বলে তাদের প্রতিরাতে ৯ ঘণ্টা বা আরো বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন হতে পারে।’

ডা. চিকের মতে, ইনজুরি বা অসুস্থতা থেকে নিরাময়কালে যেকোনো বয়সের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৯ ঘণ্টা বা এর বেশি ঘুমের দরকার হতে পারে। এখন করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে বলে এ বিষয়টা স্মরণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমালে কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব হতে পারে।

ডা. কোলার মতে, কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু লোকের ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন হতে পারে। আবার কেউ কেউ মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েই স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারেন। এরা হলো ন্যাচারাল ভ্যারিয়েন্ট।

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, পেঁচা হওয়ার চাইতে সকালের পাখি হওয়াই ভালো। অর্থাৎ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকাল সকাল ওঠলে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ বেশি হবে। ডা. চিক বলেন, ‘যদি আপনি পেঁচা হন, কিন্তু সকাল ৮টায় অফিস করতে হবে, তাহলে ঘুমের অভাবে মন ও শরীরের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে বেশিদিন লাগবে না।’

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img