চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো বিরল ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী। করোনা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পর ষাটোর্ধ্ব ওই নারীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়। বিরল ছত্রাকজনিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে চারদিন ধরে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে হাসপাতালে রাখা হলেও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকটের কারণে চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও পরিবারের লোকজন।
জানা যায়, গত মাসের ২৫ তারিখ থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন ষাটোর্ধ্ব গৃহিনী ফেরদৌস বেগম। চলতি মাসের ৩ তারিখ তিনি কোভিড টেস্টে পজেটিভ হন। ১৫ জুলাই কোভিড নেগেটিভ হলেও উনার নানা শারিরীক অসুবিধা দেখা দেয়। পরে স্বজনরা তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকিৎসকরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে এই রোগীর শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছে ধারণা করছেন।
ব্ল্যাক ফাংগাসে আক্রান্ত এই নারীর চিকিৎসায় এমপোটেরিসিন-বি ইনজেকশন প্রতিদিন ৫ ভায়াল করে মোট ১৪ দিন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মাকে বাঁচাতে ব্যয়বহুল এই ওষুধ এখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন সন্তানরা। কিন্তু তা এখনও পাওয়া যায়নি। আক্রান্ত এই নারীর স্বামী পাঁচদিন আগে করোনা পজেটিভ হয়ে মারা গেছেন। এখন তাঁর সন্তানেরা চোখের জলে ছুঁটোছুটি করছেন ওষুধের জন্য।
রোগীর ছেলে মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘পাঁচদিন আগে আমি আব্বাকে হারিয়েছি। এখন আমার মা জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তার জন্য এমপোটেরিসিন-বি ইনজেকশনটি খুঁজছি। কিন্তু তা পাওয়া যাচ্ছেনা। প্লিজ আপনারা এই ওষুধের সন্ধান দিন। যত টাকা লাগে আমরা দিব। আমার মাকে বাঁচাতে চাই।’
বিরল এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই হাতেগোনা। তাই সরকারিভাবে আপাতত এই পরামর্শ মতো ইনজেকশন যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তবে রোগী বাড়লে সরকারি নির্দেশনা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।
এই ইনজেকশনটির বিষয়ে চট্টগ্রামে সিভিল সার্জন ডা.সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এই রোগে যে ইনজেকশন প্রয়োজন তা এখনও দেশে নেই। ঢাকায় এক রোগীকে যে ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়েছিল তা কার্যকর প্রমাণিত হয়নি।’
চিকিৎসকরা বলছেন, খুব কাছাকাছি দীর্ঘ সময় ধরে সংস্পর্শে না গেলে এই রোগ সংক্রমনের ঝুঁকি কম। মূলত,কোভিড আক্রান্তদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা বেশি। তবে শুরু থেকেই এই রোগে চিকিৎসা করা জরুরী।
চমেক হাসপাতলের মেডিসিন বিভাগ সাবেক বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আমির হোসাইন বলেন, ‘এটা খুব দুর্লভ একটা রোগ। সাধারণ এই রোগের চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। তবে এই রোগ কারো শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হবার কথা না। তবে যদি কেউ ক্লোজ কন্টাক্টে থাকে তাহলে তিনিও আক্রান্ত হতে পারে।’