বর্তমান সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। সাধারণ আলাপচারিতা আর আড্ডাবাজি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত অনেক তথ্যই থাকে ফেসবুক। তবে এখানেও বাধ সাধছে হ্যাকাররা। দিন দিন ফেসবুকে হ্যাকারদের দৌরাত্ম বাড়ছে। একটু অসচেতন হলেই ব্যক্তিগত সব তথ্য এবং ছবি চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে। জেনে নিন হ্যাকারদের হাত থেকে কীভাবে নিরাপদ রাখবেন আপনার ফেসবুক আইডি।
হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে হলে জানতে হবে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি আপনি ছাড়া অন্য কেউ ব্যবহার করছে কিনা। অনেকেই মনে করেন, হ্যাকারকে শনাক্ত করা মুশকিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা হ্যাকারকে চেনার কিছু সহজ কৌশল বলে দিয়েছেন।
১. ফেসবুক ওপেন করুন।
২. এবার থ্রি-লাইন মেনুতে যান।
৩. তারপর ‘সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি’ অপশনে ক্লিক করুন।
৪. ‘সেটিংস’ অপশন সিলেক্ট করুন।
৫. নিচে স্ক্রল করে ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড লগ-ইন’ অপশন সিলেক্ট করুন।
৬. এবার আপনি দেখবেন, ‘হোয়্যার ইউ আর লগড-ইন’ লেখাটি। ডান পাশে থাকা ‘সি-অল’ মেনুতে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের ইতিহাস দেখতে পাবেন। অর্থাৎ আপনি যে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করে ফেসবুক লগ-ইন করেছেন
সেগুলো দেখা যাবে।
লগ-ইন হিস্টরি দেখার সময় যদি কোনো অচেনা ডিভাইস চোখে পড়ে, তাহলে ধরে নিন আপনার অ্যাকাউন্টটি ইতোমধ্যেই হ্যাক হয়ে গেছে। অর্থাৎ আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি কারও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এমন ঘটনা ঘটার দুটি কারণ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হলো আপনি হয়তো কোনো পরিচিত মানুষের বা বন্ধুবান্ধবের ডিভাইসে ফেসবুক লগ-ইন করেছিলেন, কিন্তু পরে লগ-আউট করতে ভুলে গেছেন। এখন সে হয়তো এর সুযোগ গ্রহণ করছে। আর দ্বিতীয়টি হলো অপরিচিত কোনো হ্যাকার অসাধু উদ্দেশ্যে কিংবা প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আপনার ফেসবুক হ্যাক করেছে। আপনার অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে এমনটি হলে কী করবেন?
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট যদি কারো কুনজরে পড়ে অর্থাৎ হ্যাক হয়ে যায়, তাহলে লগ-ইন হিস্টোরিতে যে ডিভাইস অচেনা মনে হয়, সেটি লগ-আউট করে দিন। কীভাবে?
ডিভাইসটির ডান পাশে থাকা থ্রি-ডট মেনুতে ক্লিক করুন। এবার নিচের দিকে দুটি অপশন আসবে। একটি সিকিউর লগ-ইন, অন্যটি লগ-আউট। আপনি ‘লগ-আউট’ অপশন সিলেক্ট করে দেবেন। ফলে যে ডিভাইসে আপনার অ্যাকাউন্ট লগ-ইন করা রয়েছে, সেখানে লগ-আউট হয়ে যাবে।
এবার একদম নিচের দিকে ‘লগ-আউট অব অল সেশনস’ অপশন দেখতে পাবেন। এতে ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্ট যেসব জায়গায় লগ-ইন করা রয়েছে, সব লগ-আউট হয়ে যাবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী আপনাকে বিভিন্ন ডিভাইসে লগ-ইন করতে হবে।
কিন্তু প্রতিকারের থেকে প্রতিরোধ উত্তম। সেক্ষেত্রে হ্যাক হবার আগেই নিরাপদ করুন আপনার ফেসবুক একাউন্টটি। কিন্তু কীভাবে নিরাপদ করবেন আপনার অ্যাকাউন্ট তা নিয়ে ভাবনা?
থ্রি-লাইন মেনুতে ক্লিক করুন। এবার স্ক্রল করে ‘সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি’ ক্লিক করুন এবং ‘সেটিংস’ অপশন সিলেক্ট করুন। ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড লগ-ইন’ অপশনে যান। তারপর স্ক্রল করলে ‘গেট অ্যালার্টস অ্যাবাউট আনরিকগনাইজড লগ-ইনস’ অপশন দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করুন। এবার আপনি নোটিফিকেশনস, মেসেজেস এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস- তিনটি অপশন পাবেন। যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে আপনাকে। তবে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, এই ৩ অপশনই অন করে রাখা ভালো। এতে যখন কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে যাবে, তখন আপনাকে সেটি জানিয়ে দেওয়া হবে। ফেসবুকে আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস যোগ করা না থাকলে ওপরে ‘অ্যাড ই-মেইল অ্যাড্রেস’ ক্লিক করে যোগ করে নিন।
হ্যাকিং থেকে সুরক্ষার জন্য ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ সবচেয়ে কার্যকরী সেটিংস। ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড লগ-ইন’ অপশনে গিয়ে আপনি অথেনটিকেশন অ্যাপ, টেক্সট মেসেজ (এসএমএস) এবং সিকিউরিটি কি- তিনটি সেটিংস দেখতে পাবেন। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর অপশন হলো টেক্সট মেসেজ (এসএমএস)। তাই ‘টেক্সট মেসেজ (এসএমএস)’ অপশন সিলেক্ট করে নিচে থাকা ‘কন্টিনিউ’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এবার আপনাকে একটি ফোন নম্বর দিতে হবে। যেটি এখন ব্যবহার করছেন। এই নাম্বারে ফেসবুক আপনাকে ভেরিফিকেশন কোড পাঠাবে।
ফেসবুকে ফোন নম্বর দেওয়া না থাকলে নিচে থাকা ‘অ্যাড ফোন নম্বর’ অপশনে ক্লিক করে যোগ করে নিন। এবার ‘কন্টিনিউ’ বাটনে ক্লিক করুন। এবার ফেসবুক থেকে আপনার নম্বরে একটি কোড পাঠানো হবে। সেটি দিয়ে কার্যকর করুন আপনার অ্যাকাউন্টের ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’। ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ করা থাকলে হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড জানলেও লগ-ইন করতে পারবে না। একটি কোড পাঠিয়ে ফেসবুক আপনাকে জানিয়ে দেবে কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকের চেষ্টা করেছে।
এন-কে