চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের ৪০তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা হয়নি। আজ ১৯ জুন, শনিবার এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার দিনদক্ষণ নির্ধারণ ছিলো। একই সাথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিচয়ে এসএম মোরশেদ হোসেনকে কোনোরকম কার্য পরিচালনা না করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
গত বুধবার (১৬ জুন) হাসপাতালের দুইজন আজীবন সদস্যের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে সভাটি স্থগিত ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির কার্য পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মোরশেদ নিজেই। তিনি বলেন, পরিচালনা পরিষদের ৪০তম সাধারণ সভা ছিলো আজ। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে পূর্ব নির্ধারিত সভা বাতিল করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতি তিন বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে হাসপাতালের পরিচালনা পরিষদের গঠিত হয়। সেই হিসাবে ২০১৭-২০ ইং নিবার্চিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ৩০শে জুন। পরিষদ না থাকলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সদস্যরা ট্রাস্ট কমিটির সদস্য হিসেবে গণ্য হন।
হাসপাতাল পরিচালনা বিধি অনুযায়ী কোনো কারণে যথা সময়ে নিবার্চন অনুষ্ঠিত না হলে মেয়াদোত্তীর্ণ সময়ে ট্রাস্ট কমিটি হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অভিযোগ উঠেছে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নিজেকে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিচয় দিয়ে বেআইনিভাবে নীতি বহিভূর্ত কাজ করছেন এসএম মোরশেদ হোসেন। হাসপাতাল পরিচালনায় ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্তও নিয়েছেন তিনি।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০ ইং নিবার্চনে কমিটির সভাপতি নিবার্চিত হন এএসএম ফজলুল করিম। তিনি প্রবাসে জীবনযাপন করায় লিখিতভাবে প্রফেসর ডা. তাহের খাঁনকে কার্যকরী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। করোনাকালীন সময়ে প্রফেসর ডা. তাহের খাঁন অসুস্থ হয়ে পড়লে মৌখিকভাবে সভা পরিচালনার জন্য এসএম মোরশেদকে দায়িত্ব দেন তিনি। সেই থেকে অদ্যাবধি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পরিচয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এসএম মোরশেদ।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বা ট্রাস্ট কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা না থাকলেও পূর্বের কমিটির কিছু অংশ সদস্যদের সাথে নিয়ে মূল কমিটিতে ৬টি পদবী বৃদ্ধিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এসএম মোরশেদ। আর এ কারণেই চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের আজীবন সদস্য মো. সাজ্জাদ আলী ও আনোয়ারুল হক বাদী হয়ে ৪০তম সাধারণ সভার কার্যক্রম স্থগিত করাসহ কমিটির ২৪ জনকে বিবাদী করে মামলা (মামলা নং-৪৪৮/২০২১) দায়ের করেন।
মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত ৪০তম সাধারণ সভা ও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিচয় দেয়া এসএম মোরশেদ হোসেনকে এই পরিচয়ে কোনো কার্য পরিচালনা করতে পারবে না মর্মে আদেশ দেন চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী জজ ২য় আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদি পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট সেলিম উদ্দিন।
এডভোকেট সেলিম উদ্দিন জানান, কার্যকরী কমিটির সভাপতি কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়েও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে যাওয়া সম্পূর্ন বেআইনি ও এখতিয়ার বর্হিভূত। বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯ জুন থেকে সাধারণ সভা পরিচালনা বা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পরিচয়ে এসএম মোরশেদ হোসেনকে কোনো প্রকার কার্য পরিচালনা না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক কার্যকরী কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, জনগণ ও সরকারের অর্থে পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল। কোনো প্রকার দালিলিক প্রমাণছাড়া এমন গুরু দায়িত্ব পালন বেআইনি। তারপরও কিভাবে তিনি ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তা কারো বোধগম্য নয়।
সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রফেসর ডা. তাহের খাঁন বলেন, গত বছর করোনাকালীন সময়ে আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই ভার্চুয়ালি মিটিং করার জন্য সহ-সভাপতি হিসেবে মোরশেদ হোসেনকে আমি নির্দেশ দিই। এসময় পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা ভার্চুয়ালি মিটিং করতে অপরাগত প্রকাশ করলে সহ-সভাপতি এসএম মোরশেদ হোসেনকে আমি মৌখিকভাবে বলেছিলাম হাসপাতালের নিয়মিত মিটিংগুলো পরিচালনা করতে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন কখনো হইনি। তাই আমি বিষয়টি বলতে পারছি না।
তবে দায়িত্ব পালন করায় আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি বলে দাবি করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মোরশেদ হোসেন। আদালতের নির্দেশে ৪০তম সাধারণ সভা স্থগিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিচালনা বিধিতে ট্রাস্ট কমিটি কার্য পরিচালনার কথা থাকলেও মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিও কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
এন-কে