দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করায় চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হয়েছে। সেইসাথে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সরওয়ার আলমকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বিকাল ৪টার দিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের জরুরী সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক এম এ মন্জুর সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৮ জুন চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলমের নেতৃত্বে চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র এবং আসন্ন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী, চকরিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী ও অনেক ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং নৌকা প্রতীকের সমর্থক কর্মীদের জাফর আলম, জাহেদুল ইসলাম লিটু সহস্তে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়। তাই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটানোর জন্য জড়িত সকলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব করেন। একইসাথে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম পূর্বে এ ধরনের আরও অনেক সন্ত্রাসীমূলক ঘটনা ঘটানোর কথাও বলেন।
এতে বলা হয়, এর আগেও আরও দুইবার বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের জন্য সাংসদ জাফর আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং ভবিষ্যতে সংশোধনের স্বার্থে তাকে ক্ষমা করা হয়। এতে হিতে বিপরীত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে তিনি আরও বেশী স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন এবং ৮ জুন একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তির মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে। তদুপরি তিনি সবসময় জেলা আওয়ামী লীগ সম্পর্কে জনসম্মুখে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে দলের ভাবমূর্তিকে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করে।
সাংসদ জাফর আলম স্থগিত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় ভাবে মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নিজ ভাতিজা কুখ্যাত সন্ত্রাসী জিয়াবুল হককে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে দাড় করিয়ে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীদের তার পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনের মারাত্মক ক্ষতি করতে থাকে।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপিকা এথিন রাখাইন, শাহ আলম চৌধুরী রাজা, রেজাউল করিম, কানিজ ফাতেমা আহমদ এমপি, লেঃ কর্ণেল অবঃ ফোরকান আহমদ, মাহবুবুল হক মুকুল, এড. আয়াছুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম, খালেদ মাহমুদ, এ.টি.এম. জিয়া উদ্দিন চৌধুরী, এড. মমতাজ আহমদ, মেয়র মকসুদ মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, আমিনুর রশিদ দুলাল, সোনা আলী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- এড. বদিউল আলম সিকদার, এম. আজিজুর রহমান, মোঃ শফিক মিয়া, জাফর আলম চৌধুরী, এড. আব্বাস উদ্দিন চৌধুরী, নুরুল আবছার চেয়ারম্যান, আবুহেনা মোস্তফা কামাল, এড. ফরিদুল আলম, হেলাল উদ্দিন কবির, ড. নুরুল আবছার, এড. তাপস রক্ষিত, কাজী মোস্তাক আহমদ শামীম, নুসরাত জাহান মুন্নি, এম.এ. মনজুর, আদিল উদ্দিন চৌধুরী, শফিউল আলম চৌধুরী, এড. আবদুর রউফ, মিজানুর রহমান, জি.এম. আবুল কাসেম, বদরুল হাসান মিল্কী, উম্মে কুলসুম মিনু প্রমুখ।
উল্লেখ্য যে, সাবেক জাসদ-বাসদ নেতা জাফর আলম বিগত সময়ে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে চকরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতিকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক চকরিয়া থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে তাকে নিজ হাতে মারধর করেন।
এদিকে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার রাতে পৌরসভা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শেষে পৌর ভবনের পাশে চিংড়ি চত্বর এলাকায় বসেন চকরিয়া পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারসহ ৪০-৫০ জন নেতা-কর্মী।
ওই সময় বেতুয়া বাজার এলাকায় জনৈক বীর মুক্তিযোদ্ধার জানাজা শেষে পৌরসভার চিংড়ি চত্বর এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন কক্সবাজার-১ আসনের (চকরিয়া-পেকুয়া) সাংসদ জাফর আলম। ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দেখে প্লাস্টিকের লাঠি হাতে গাড়ি থেকে নামেন সাংসদ। এ সময় কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে পিটুনি দেন তিনি। তাঁর সঙ্গে থাকা ডুলাহাজারা ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা আতিক ও যুবলীগের নেতা রেফায়েত সিকদারকে ধাক্কা দেন। এতে তাঁরা আহত হন। ওই সময় চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদ্য অব্যাহতিপ্রাপ্ত সভাপতি জাহেদুল ইসলামও সাংসদের গাড়ি থেকে নেমে কয়েকটি চেয়ার ভাঙচুর করেন।
পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মেয়র আলমগীর চৌধুরী সাংসদকে গাড়িতে তুলে দিলে সাংসদ বাড়ি ফিরে যান। তবে খবর ছড়িয়ে পড়ে মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরীর ওপর প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা করেছে। এ খবরে মেয়র প্রার্থীর বাড়ির এলাকা কাহারিয়াঘোনা থেকে শতাধিক কর্মী-সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে চিংড়ি চত্বর এলাকায় যান। আলমগীরের কর্মী-সমর্থকেরা সাংসদ জাফর আলম ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জিয়াবুল হকের (সাংসদের ভাতিজা) বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
মেয়র প্রার্থী আলমগীর চৌধুরী বলেন, সাংসদ হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে লাঠি হাতে নেতা-কর্মীদের তাড়া করেন। তাঁর সঙ্গে থাকা হাসানুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের গায়ে হাত তোলেন।
সাংসদের এমন আচরণ সম্পর্কে আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘সাংসদের ভাতিজা জিয়াবুল হক ২১ জুন অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে মেয়র পদে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। তাছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া জাহেদুল ইসলাম সাংসদের অনুসারী। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ও জাহেদুলকে অব্যাহতির খবরে সাংসদ এমন আচরণ করেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সাংসদ ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানের জানাজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে কয়েকজন ছেলে আমার গাড়ির গতিরোধ করে স্লোগান দিতে থাকে। এমন সময় আমি প্লাস্টিকের একটি লাঠি হাতে গাড়ি থেকে বের হয়ে এক ছেলেকে আঘাত করতেই অন্যান্য ছেলেরা পালিয়ে যায়। এ সময় মেয়র প্রার্থী আলমগীর এসে আমার পায়ে ধরে বলে, ‘‘ছেলেরা ভুল করেছে। মাফ করে দেন।’’ তখন আমি গাড়িতে উঠে বাড়িতে চলে আসি। এখানে কাউকে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেনি। এসব অবাস্তব ও অবান্তর কথা।’