লেবাননের রাজধানী বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ভোররাতে ইসরায়েলে হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন।
লেবাননে স্থল অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহর সঙ্গে লড়াইয়ে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দিন দেখার পরদিন এ হামলা চালাল দেশটি।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা লেবাননের রাজধানীতে একটি সুনির্দিষ্ট বিমান হামলা চালিয়েছে।
রয়টার্সের প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকরা ব্যাপক একটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন। বৈরুতের এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্লামেন্টের কাছে বাশুরা এলাকার একটি ভবনকে লক্ষ্যস্থল করা হয়। এই ভবনটি হিজবুল্লাহর ইসলামিক স্বাস্থ্য সংস্থার মালিকানাধীন।
সিএনএন জানিয়েছে, ২০০৬ সালের পর থেকে বৈরুতের কেন্দ্রস্থলে এটিই ইসরায়েলের প্রথম হামলা।
লেবাননের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছেন। লেবাননের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবন ও এর প্রথম তলায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। রয়টার্স তাৎক্ষণিকভাবে ছবিটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি।
লেবাননে জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়ক জেনিন হেনিস-প্লাশকার্ট বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স এ লিখেছেন, বৈরুতে আরেকটি নির্ঘুম রাত। শহরকে কাঁপিয়ে দেওয়া বিস্ফোরণগুলো গুণছি। কোনো সতর্কতামূলক সাইরেন নেই। এরপর কী হবে জানিনা। সামনে শুধু অনিশ্চয়তা। সর্বব্যাপী ভয় আর উদ্বেগ।
লেবাননের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ যেখানে নিহত হয়েছেন বৈরুতের দক্ষিণ অংশের সেই দাহিয়ায় তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে আর জোরালো বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) দক্ষিণ লেবাননের যেসব গ্রামের বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন তাদের পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ফিরতে নিষেধ করেছে।
আইডিএফের মুখপাত্র অভিচয় আদ্রে বৃহস্পতিবার সামাজিক মাধ্যম এক্স এ ওই এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে।
বুধবার দক্ষিণ লেবাননে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় তাদের আট সেনা নিহত হয়েছে বলে ইসরায়েল জানিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, মূলত সীমান্ত এলাকায় হিজবুল্লাহর টানেল ও অন্যান্য অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য তারা লেবাননে অনুপ্রবেশ করেছে, বৈরুত বা উত্তর বা দক্ষিণের কোনো গুরুত্বপূর্ণ শহরে বড় ধরনের অভিযান চালানো কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।
এদিকে গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর ঘটনায় ইরান ও লেবাননের মানুষ সড়কে নেমে উল্লাস প্রকাশ করেছে। এ সময় আতশবাজির ঝলকানি দেখা গেছে। অনেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করে। হামলার খবর জানার পরপরই ইরানের রাজধানী তেহরানের সড়কে নেমে আসে অনেক মানুষ। তাদের অনেকেই ইরান ও হিজবুল্লাহর পতাকা ওড়ায়।
তবে এই হামলাকে উসকানি হিসেবে দাবি করে প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এ ব্যাপারে সাবেক ইসরায়েলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা আভি মেলামেদ বলেছেন, ‘ইরানের হামলা হলো ইসরায়েলকে বড় ধরনের পাল্টা হামলার জন্য উসকানি দেওয়া—আমরা ইরানি লক্ষ্যবস্তুগুলোতে উল্লেখযোগ্য ও তাৎক্ষণিক ইসরায়েলি জবাব দেখতে পাব।’
এদিকে ইসরায়েল প্রতিক্রিয়া জানালে ইরানও পাল্টা হামলার হুমকি দিয়েছে। গতকাল সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ‘আমাদের পদক্ষেপ শেষ হয়েছে, যদি না ইসরায়েলি শাসক আরো প্রতিশোধের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের জবাব আরো জোরালো ও শক্তিশালী হবে।’
অন্যদিকে ইরানের হামলার ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, ‘এ বিষয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে একযোগে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
ইরান ইসরায়েলে যে ১৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, তার একটি তেল আবিবের কাছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তরের কাছে গিয়ে পড়েছে। সামাজিক মাধ্যমে আসা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর মোসাদের সদর দপ্তরের কাছে বিশাল এক গর্ত তৈরি হয়েছে। এদিকে ইরান ও ইসরায়েলকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য, ভারত, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
এমজে/