নিত্যপণ্য আমদানির জন্য ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এই চুক্তি সই করবে।
আজ বুধবার (২৬ জুন) সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। সচিবালয় কাভার করা সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, নিত্যপণ্য জিনিসগুলো আনতে, সেটার সরবরাহ যেন নিরবিচ্ছিন্ন থাকে সে জন্য ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে যাচ্ছি। আপনারা শুনলে হয়তো আশ্চর্য হবেন, মিয়ানমার, যাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে আমাদের এতইৃ মিয়ানমারের সঙ্গে নৌ-পরিবহন যোগাযোগ এবং নিত্যপণ্য আনতে… সীমান্তবর্তী একটি দেশ ভারত, আরেকটি মিয়ানমার। মিয়ানমার থেকেও যেন আমরা কৃষি উৎপাদিত পণ্যগুলো আনতে পারি, যেগুলো তাদের উদ্বৃত্ত আছে। অনেক বড় দেশ তাদের, অনেক উদ্বৃত্ত পণ্য আছে। এ বিষয়ে একটি চুক্তি আমরা প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি। আগামী জুলাই মাসে আমরা সেই চুক্তিটা সই করতে চেষ্টা করব।
তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকেও আমরা পেঁয়াজ ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আনতে পারব। লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো আমাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে কিছুটা হলেও যেন সাধারণ মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে পারি। কিছুটা হলেও যেন বাজার সচল রাখতে পারি। সে জন্যই আমরা এই কার্যক্রম পরিচালনা করছি।
আহসানুল ইসলাম আরও বলেন, আগে ট্রানজেকশনগুলো শুধু পোর্টে হত, এখন অনেকগুলো ল্যান্ডপোর্ট ওপেন হয়েছে। ল্যান্ডপোর্টের সঙ্গে আমরা বর্ডার হাটগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি। অনেক দুর্গম এলাকায় আমাদের বর্ডার আছে। সেখানে জনবিচ্ছিন্ন মানুষ আছে, তাদের সুবিধা বাড়ানোর জন্য আমরা কয়েকটা বর্ডার হাট করেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিডের জন্য কিছুটা স্থগিত ছিল, আবার আমরা বর্ডার হাটের দিকে নজর দেব। দুই সরকারেরই বর্ডার হাটের ব্যাপারে আগ্রহ আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা দ্রুত দুর্গম বর্ডার এলাকায় বর্ডার হাট প্রতিষ্ঠা করব। এতে আমাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য অনেক সহজ হবে।
তিনি আরও বলেন, অনেকে হয়তো জানেন না, আগে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি, ২৩টি দেশে আমাদের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর আছেন। যারা সরাসরি আমাদের অধীনস্থ, যাদের আমরা সরাসরি মনিটরিং করি। তাদের আমরা একটা জবাবদিহিতায় এনেছি। তারা প্রতি মাসে অতিরিক্ত সচিবকে রিপোর্ট করেন। সেখানেও আমাদের কর্মকাণ্ড জোরদার করছি। যেন নতুন নতুন মার্কেট এক্সেস, নতুন নতুন পণ্য আমরা বাজারজাতকরণ করতে পারি।
বোতলজাত পানির দাম বাড়ানো নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমি প্রথম শুনলাম এটা। খবর নেব এটার, কেন বাড়ানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের কী করণীয়, অবশ্যই আমরা এটার ব্যবস্থা নেব।
সাবান ও গুঁড়া সাবানের দাম নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাবান নিয়ে এর আগে কেউ প্রশ্ন করে নাই। এটা নিয়ে কোনো কিছু করণীয় আছে কিনা সেটা দেখব। আপনাদের বিষয়টি আমি গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। অনেক বিষয় আছে সেটা আমাদের কিনা সেটা দেখতে হবে। শিল্পগুলো শিল্প মন্ত্রণালয়ের। তাই সাবানের দাম নির্ধারণের এখতিয়ার আমাদের আছে কি না সেটা দেখে আপনাদের জানাব।
বাজারে আলুর দাম ৭০ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি- এই দাম স্বাভাবিক মনে করেন কি না, প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাজারে আলু ও পেঁয়াজ পর্যাপ্ত আছে, এটাকে স্বাভাবিক বলে মনে করি। আমি দেখব, সেটা বার বার বলার চেষ্টা করতেছি।
তিনি বলেন, যেকোনো দ্রব্যের মূল্য নির্ভর করে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর। আমরা যদি সরবরাহ করতে পারি, তাহলে দাম কমে যাবে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাজারে আলু ও পেঁয়াজ কম দামে সরবরাহ না থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যে মূল্য আছে সেটা আমাকে দেখতে হবে। আমি চাইলেই কাউকে এমন কোনো আইন করে বলতে পারব না যে, পেঁয়াজের দাম এতো। অত্যন্ত আমি পারব না। সেটা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলতে পারবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার মেকানিজম আমার জানা নেই। আমার যেটা জানা আছে, যদি দাম বেড়ে যায়, তাহলে আমদানি করে কম দামে বাজারে সরবরাহ করলে দাম কমে যাবে।
বিএসআরএফ সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাবের সভাপতিত্বে সংলাপ সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
এমজে/