প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারের নির্বাচন একটা যুগান্তকারী ঘটনা। নির্বাচন নিয়ে এত আগ্রহ আগে কখনো দেখিনি। সব সময় চেষ্টা ছিল নির্বাচন সুষ্ঠু করার। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে, তা প্রমাণিত হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন, জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন, এ বিজয় আমার নয়, এ বিজয় জনগণের বিজয়।
গতকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) গণভবনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে সবকিছুই করেছে আওয়ামী লীগ। এবারের বিজয় জনগণের বিজয়। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্রের জন্য এই নির্বাচন যুগান্তরকারী ঘটনা। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর এবার স্মাট বাংলাদেশ গড়ে তোলায় লক্ষ্য। বাংলাদেশের একটি মানুষও হতদরিদ্র থাকবে না।
সবার জন্য কর্মসংস্থানের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরও বলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। মানুষের মৌলিক অধিকার আরও নিশ্চিত করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবার সরকার গঠনের পর তিনটি ধাপে কর্মপরিকল্পনা করা হয়। বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সবসময় সহযোগিতা পাচ্ছি।পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আমাদের নীতি সবার সঙ্গে বন্ধত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ৮ বার নির্বাচন করেছি।, এবার আবার। এবার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষ দরিদ্র ছিল। বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষ উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। বাবা যে আদর্শ নিয়ে কাজ করেছেন, আমাকে সেই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যাতায়াতের কোন পথ ছিলো না, অনেক সময় পায়ে হাঁটতে হয়েছে। ছোট নৌকা, স্পিড বুট বা মাছের নৌকা দিয়ে সাগর পাড়ি দিতে হয়েছে। ২১ বছর পর যখন ক্ষমতায় এসেছি মানুষের কাজ করার জন্য, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করা, আমাদের দলের নীতিমালা আমরা তৈরি করি, আমাদের ইকোনোমিক পলিসি থেকে সব প্রস্তুত ছিলো সেভাবে কাজ করতে থাকি। আবার আমাদের সমস্যা দেখা দেয়, ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়। আমি গ্রেফতার হয়। এরপর নির্বাচন হয় ২০০৮ এ। সে নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়। সে নির্বাচনে আমাদের দল ২৩৩টা সিটে জয়ী হয়। বিএনপি তারা পেয়েছিলো মাত্র ৩০টা সিট। বাকি সিট অন্যরা পায়।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আর আমি বেঁচে যাই। ছয় বছর আমরা রিফিউজি ছিলাম। খুব কষ্টকর জীবন। ১৯৮১ সালে আমাকে দেশে আনে। মিলিটারি ডিক্টেটররা দলকে রাজনীতি করতে দেয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের ক্ষমতায় বসায়। ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরি। আমার লক্ষ্য ছিল, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমার চলার পথ সহজ ছিল না। মৃত্যুকে বারবার কাছে থেকে দেখেছি। বাবার আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করে মানুষের জন্য কাজ শুরু করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলিটারি ডিক্টেটররা আমার দলকে রাজনীতি করতে দেয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে তাদের ক্ষমতায় বসায়। ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরি। আমার লক্ষ্য ছিল, মানুষের ভোটাধিকার রক্ষা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমার চলার পথ সহজ ছিল না। মৃত্যুকে বারবার কাছ থেকে দেখেছি। বাবার আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করে মানুষের জন্য কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে যারা নারী ধর্ষণ করেছিল, লুটপাট করেছিল,অগ্নিসংযোগ করেছিল, স্বাধীনতার পরপর তাদের বিচার শুরু হয়েছিল। কিন্তু মিলিটারি ডিক্টেটর ক্ষমতায় এসে বিচারের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের ক্ষমতায় বসায়। যখন আমার মা-বাবার খুনিরা এবং যুদ্ধাপরাধীরা ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি। আমার আসার একটাই লক্ষ্য ছিল- বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা; মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্রের মধ্য দিয়ে আর্থসমাজিক উন্নতি করা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমার চলার পথটা এত সহজ ছিল না, অনেকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। আমি মুখোমুখি মৃত্যুকে দেখি, কখনও গুলি, কখনও বোমা হামলা, কখনও গাড়িতে হামলা। আমি যখন শান্তি র্যালি করছিলাম তখন গ্রেনেড হামলা করা হয়। আমার দলের নেতাকর্মীরা আমাকে রক্ষা করে মানবঢাল রচনা করে। অনেকে জীবন দেয়। জনগণের কথা বলতে গিয়ে অনেকবার গ্রেপ্তার হয়েছি, বন্দি হয়েছি। তারপরও আমি দমে যাইনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই আমার লক্ষ্য। এবারের নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন করার পাশাপাশি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি। মানুষের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। এ বিজয় জনগণের বিজয়।
তিনি বলেন, একটি দল নির্বাচন বর্জন করেছে। মিলিটারি ডিক্টেটর থেকে যে দল সৃষ্টি তারা নির্বাচন ভয় পায়, কারণ তাদের জনসমর্থন থাকে না।
বিদেশি বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার জন্য তিনি নিজের, পরিবার ও দেশের মানুষের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আপনারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন, আমাদের দেশের কথা বলবেন। আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর।
গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এসময় দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক, বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে পুতুলসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হয়। ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হয় ২৯৯টি আসনে। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে ভোটগ্রহণ স্থগিত ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।
এমজে/