আজ শনিবার (৯ ডিসেম্বর) নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে উত্তর চট্টগ্রামের রণাঙ্গন হাটহাজারীর নাজিরহাটে পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটেছিল।
পাক বাহিনী চলে যাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিকামী ছাত্র জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাস। দিনভর ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধা এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের জওয়ানেরা চাঁদের গাড়িতে করে কামান এবং অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মানচিত্র অংকিত পতাকা নিয়ে আনন্দ উল্লাস করে নাজিরহাটে সমবেত হন। সেদিন চলছিল বিজয়ের উৎসব।
গোপন সংবাদ পেয়ে পলাতক পাক হানাদার বাহিনী সন্ধ্যায় হাটহাজারীর অদুদিয়া মাদ্রাসার সামনে থেকে ৩/৪ টি বাসে নাজিরহাট আসে। তারা উল্লাসরত মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ জনতার উপর অতর্কিত হামলা চালায়। শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ।
ওই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা নায়েক তফাজ্জল হোসেন (বরিশাল), সিপাহী নুরুল হুদা (কুমিল্লা), সিপাহী অলি আহম্মদ (খুলনা), সিপাহী নুরুল ইসলাম (সন্দ্বীপ), সিপাহী মানিক মিয়া (চট্টগ্রাম), ফোরক আহম্মদ (নাজিরহাট), হাসিনা খাতুন (নাজিরহাট), আবদুল মিয়া (নাজিরহাট), নুরুল আবছার (কুমিল্লা), মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক (ফরহাদাবাদ) ও অজ্ঞাতনামা একজন সহ ১১জন শহীদ হন।
এরপর পাক হানাদার বাহিনী ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নাজিরহাট, ফটিকছড়ি এবং হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ লুঠতরাজ, নাজিরহাট হালদা নদীর সেতু ধ্বংস হত্যাযজ্ঞসহ নারকীয় কর্মকাণ্ড চালায়।
স্মৃতিচারণ করে হাটহাজারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল আলম জানান, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয়েছিল ফটিকছড়ি। নাজিরহাটে ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা চেকপোস্ট। ৯ ডিসেম্বর ফটিকছড়ি হানাদারমুক্ত হয়েছিল। সে উপলক্ষে নাজিরহাটের সুন্নিয়া মাদরাসায় ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধারাসহ সাধারণ জনতা এসে দিবসটি উদযাপনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল।
‘কিন্তু সে সময় নাজিরহাট বাসস্টেশনে গেরিলা চেকপোস্টে দায়িত্বরতরাসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা একত্রে নাজিরহাট সুন্নিয়া মাদরাসায় আসার জন্য দাঁড়ালে তখন তাদেরকে দেখতে ছুটে আসেন অনেক নারী-পুরুষ। এমন সময় জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সাদা পতাকা নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর কয়েকটি বাস আসতে দেখে তখন মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছিল পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের জন্য আসছে। কিন্তু পাক সেনারা এসেই অতর্কিত গুলিবর্ষণ শুরু করে। এসময় নাম অজানা অনেক নারী-পুরুষ নিহত হয়। তার মধ্যে আমরা ১১ জনের নাম জানতে পারলেও অজ্ঞাত অনেককে গণকবরে শায়িত করা হয়। তখন থেকেই নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস পালন করা হয়।’
নাজিরহাট হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে নাজিরহাট গণকবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি, খতমে কোরআন, বিশেষ মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল।
এমজে/