খালেদা জিয়ার চিন্তার দৈন্যতা আছে, স্বার্থপরতায় ভোগেন : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চিন্তার দৈন্যতা আছে এবং তিনি স্বার্থপরতায় ভোগেন।

সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ৮০টি সমাপ্ত প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া দেশের ৬৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপিত ‘কমিউনিটি আই সেন্টার’ উদ্বোধন করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, আমরা বিএনপির মতো এসব দৈন্য চিন্তা করি না। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি, সেগুলোতে দলমত নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষ সেবা নিচ্ছে। বিএনপির চিন্তা দৈন্য আছে। তারা সব সময় স্বার্থপরতায় ভুগে।

বিএনপি ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার চিন্তার দৈন্যতা আছে এবং তিনি স্বার্থপরতায় ভোগেন বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।

আওয়ামী লীগ সরকারের বাস্তবায়ন করা কমিউনিটি ক্লিনিক বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দিয়েছিল অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত যখন সরকার ক্ষমতায় ছিলাম তখন প্রায় ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক প্রস্তুত করেছিলাম। এর মধ্যে চার হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালুও করেছিলাম। এর মাধ্যমে আমরা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছিলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। সেসময় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়েই কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। কারণ তিনি মনে করতেন, এসব ক্লিনিকে যারা কাজ করবে বা চিকিৎসাসেবা নেবে তারা সবাই নাকি নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এই আশঙ্কায় তিনি মানুষের যে স্বাস্থ্য সেবা আমরা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছিলাম, সেটাই বন্ধ করে দেয়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা যে ঘর দিচ্ছি। যে ভূমিহীন-গৃহহীন তাদেরকেই দিচ্ছি। কে কোন দল করে সেটা কিন্তু আমরা দেখছি না। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করি। সেভাবেই তাদের সেবাটা দিই। কমিউনিটি ক্লিনিকেও তো আমরা সবার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু খালেদা জিয়া ও বিএনপি-জামায়াত জোটের চিন্তার দৈন্যতা আছে। তারা স্বার্থপরতায় ভোগে এবং মানুষের কল্যাণ চায় না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।

জলাবদ্ধতা যেন সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর রাখার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব যায়গায় পানি সরে যাওয়ার জন্য জলাধার রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের দেশকে বাঁচাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নদী নালাগুলো মানুষের জীবনের মতো। এগুলো প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। মানুষের হার্ট বন্ধ হলে যেমন মরে যায়, নদীর-নালার প্রবাহ বন্ধ হলে দেশটাই মরে যায়। শুধু পাড় বাধলেই হবে না, নদীর ড্রেজিংও করতে হবে। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রত্যেক এলাকায় নদী খাল বিল হাওরের পানি প্রবাহ ঠিক রাখতে পদক্ষেপ নিয়েছি। নদীপথগুলোও সচল করার পদক্ষেপ নিই।

বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পানির হাহাকার অনেক জায়গায়। আমরা ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে উদ্বৃত্ত থাকলে রফতানি করতে পারবো। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা অনেক ভর্তুকি দেই। এটারও ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন। পাশাপাশি নদী খাল বিল সব কিছু যেনো দূষণমুক্ত হয়, খেয়াল রাখবেন। যেকোনো প্রকল্প প্রণয়নে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখবেন। জলাধার রাখবেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি টিকা দিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধনী দেশগুলোও বিনামূল্যে করোনার টিকা দেয়নি। কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমরা বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। তখন আমাদের রিজার্ভও ভালো ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের প্রতিটি নার্স-চিকিৎসককে আলাদা করে ভাতা দিতে হয়েছে। কারণ সেই সময়ে ভয়ে কেউই এগিয়ে আসতে চায়নি। এমনকি তাদের সুরক্ষায় পিপিইসহ বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা সামগ্রী কিনে দিতে হয়েছে। করোনার টিকা দেওয়ার জন্য ভলান্টিয়ার তৈরি করতে হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশে লাখ লাখ মানুষ মারা গেছে, আল্লাহর রহমতে আমাদের তেমন ক্ষতি হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে আমরা ১০ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছি। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রথম ৪ হাজার যখন চালু করি, তখন সেগুলো ৭০ ভাগের মতো সাফল্য অর্জন করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। খালেদা সরকার ক্ষমতা এসেই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। কারণ, এখানে যারা কাজ করবে, যারা সেবা নেবে, তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবে, সুতরাং এগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে যাতে কোনো ধরনের অবহেলা না হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে, অন্ধজনের বিলাও আলো, এ কাজটা করছি। সারা বাংলাদেশে অন্ধত্ব দূর করতে মানুষকে সেবা দিচ্ছি। অন্ধত্বের হার ৩৫ শতাংশ কমিয়েছি। আরও কমাতে কাজ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের জীবেনের চাহিদা, অন্ন বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসা, সেই সাথে সাথে সড়ক যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে ২০০৯ থেকে উন্নয়ন করেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে এগুলো করতে পেরেছি। এজন্য সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

এমজে/

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ

- Advertisement -spot_img

এই বিভাগের আরও

- Advertisement -spot_img